আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৫-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

দেশে ডিজেল মজুত কম

চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে

| সম্পাদকীয়

দেশে জ্বালানি তেল তথা ডিজেলের মজুত কমে আসছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। নিয়মিত আমদানি না হওয়াই মজুত কমে আসার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। এতে সেচ মৌসুমে ডিজেলের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আলোকিত বাংলাদেশের প্রতিবেদনে প্রকাশ, রোববার দেশের সব ডিপো মিলিয়ে ডিজেল মজুত ছিল ২ লাখ ৭ হাজার টন, যা দিয়ে বর্তমান দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী ২০ দিন চলবে। অথচ ২০০৪ সালে ঘোষিত জাতীয় জ্বালানি নীতিমালায় কমপক্ষে ৬০ দিনের জ্বালানি মজুত রাখার বিধান রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে এখন ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টন। কিন্তু বিদেশ থেকে চাহিদার সমান সরবরাহ আসছে না ডিজেলের। এ অবস্থা অনভিপ্রেত। সংকট এড়াতে দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) উৎপাদন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দৈনিক ১ হাজার ৪০০ টনের স্থলে এখন ২ হাজার ২০০ টন করে ডিজেল উৎপাদন হচ্ছে। এরপরও সংকট এড়ানো যাবে কি না তা নিয়ে কাটছে না শঙ্কা। বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুতর।
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় সেচ মৌসুম। আর এ সেচ মৌসুম শেষ হবে চলতি বছরের মে মাসে। সেচ মৌসুমে ডিজেলের চাহিদা প্রতিদিন বাড়তে থাকে। বিশেষ করে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের পুরো সময় চাহিদা থাকে বেশি। বোরো মৌসুমে ধানের চারা রোপণ শুরু হয়ে যায় এ সময়। দেশে বিদ্যুৎনির্ভর সেচযন্ত্রের সংখ্যা বাড়লেও ডিজেলনির্ভর সেচযন্ত্রের চাহিদা কমেনি। অর্থাৎ এখনও বোরো মৌসুমে সেচের জন্য ডিজেলনির্ভর সেচযন্ত্রই ভরসা কৃষকের। জানা যায়, প্রতি বছর চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ নির্ধারণ করে বছরের জুন-জুলাই মাসে বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেল আমদানির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়, যাতে সেচ মৌসুমে ডিজেলের চাহিদা বাড়লে সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হয়। কোনো কারণে আমদানি চালানের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলেই ডিপোতে ডিজেল সংকট দেখা দেয়। শুধু সেচের ক্ষেত্রে নয়, পেট্রলপাম্পগুলোতেও সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এতে যানবাহনের চাহিদা পূরণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। সূত্রমতে, ডিপোতে ডিজেলের মজুত হঠাৎ কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আছে অন্যতম বড় সরবরাহকারী কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (কেপিসি) থেকে সরবরাহ হ্রাস পাওয়া, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের কারণে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় মজুত বেড়ে যাওয়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমান্তে পাচার হওয়াকেও বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
ডিজেল সংকটের মধ্যে বিপিসি চেয়ারম্যান সামছুর রহমান বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কোনো ধরনের সংকটের কথা নাকচ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কেউ ডিজেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি কিংবা অতিরিক্ত মজুত করে পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে সতর্ক করেন। তবে এখন যেটা জরুরি সেটা হলো, দেশে ডিজেল কারসাজি রোধ করার পাশাপাশি দ্রুত চাহিদা অনুযায়ী ডিজেলের আমদানি নিশ্চিত করা। নচেৎ কৃষি ও যোগাযোগ খাতসহ সর্বত্র এর বিরূপ প্রভাব পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। এ নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।