আশির দশকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের ফুটবলে ছিল রীতিমতো আকাশ-পাতাল; এখনও রয়েছে সে পার্থক্যটা। সময়ে পুরো উল্টো চিত্র, তখন বাংলাদেশ ভূরি ভূরি গোল দিত মালদ্বীপের জালে। এখন বাংলাদেশকে নিয়মিত হারাচ্ছে মালদ্বীপ, সেটা জাতীয় দল কী ক্লাব ফুটবলে! ২০১১ দিল্লি সাফের পর থেকে মালদ্বীপের বিপক্ষে জাতীয় দল বা ক্লাব কোন পর্যায়ে জয়ের সুখস্মৃতি নেই বাংলাদেশের ফুটবলে। নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচের স্মৃতিও সুখকর নয় আবাহনীর, ফেডারেশন কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে এগিয়ে গিয়েও রহমতগঞ্জের কাছে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিল স্কাই-ব্লরা। এরপরও মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের বিপক্ষে আজ এএফসি কাপের প্লে-অফ ম্যাচের আগে তাই দলের কাছে ‘নিখুঁত পারফরম্যান্স’ চাইলেন পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল ৫টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ফেডারেশন কাপের পর প্রিমিয়ার লিগ শুরু না হওয়ায় এএফসি কাপের জন্য নিজেদের গুছিয়ে নিতে এক মাস সময় পেয়েছে আবাহনী। এর মধ্যে ফেডারেশন কাপের ভুল-ত্রুটিগুলো নিয়ে কাজ করেছেন কোচ। মঙ্গলবার সেটা গণমাধ্যম পর্বে জানানও তিনি, ‘ঘরের মাঠে ভালো শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ছাড়া প্রায় এক মাস অনুশীলন করলেও প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। জয় দিয়ে শুরু করতে চাই। এ ম্যাচে এটাই মূল লক্ষ্যÑ বলা যায় ফাইনাল ম্যাচ। কারণ এখানে জিততে পারলে প্রতিপক্ষের মাঠে ভালো খেলার সুযোগ থাকে। কিন্তু এখানে প্রত্যাশা পূরণ না হলে মালেতে পেরে ওঠা কঠিন। তাই চাপমুক্ত থাকতে এখানেই যা করার করতে হবে। আমরা গোল করতে চাই এবং গোল খেতে চাই না। আমি চাই, আমার দল আক্রমণে, রক্ষণে, সেটপিসে, ট্রানজিশন পিরিয়ডে যেন আরও ভালো খেলে। আগামীকাল (আজ) যেন আমরা নিখুঁত খেলি।’ ২০১৭ সালে গ্রুপ পর্বে মাজিয়ার বিপক্ষে দুই লেগে (০-২, ০-২) হেরেছিল আবাহনী। মালদ্বীপের চ্যাম্পিয়নদের সমীহ করলেও নিজ দলের জয়ের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন লেমোস, ‘মাজিয়া ভালো দল। তাদের প্রতি কোনো অশ্রদ্ধা নেই। কিন্তু আমরা তুলনামূলক ভালো এবং জেতার জন্যই মাঠে নাব।’ গেল বছর প্রথমবার এএফসি কাপের আন্তঃআঞ্চলিক প্লে-অফ সেমিফাইনালে খেলেছিল আবাহনী। ঘরের মাঠে খেলা চার ম্যাচের সবক’টিতে জিতেছিল লিগ রানার্সআপরা। পর্তুগিজ কোচ তাই আরও বেশি আশাবাদী। গেল এএফসি কাপকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে দলের রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণে ধার আনতে মরিয়া আবাহনী।
২০১৭ সালে এএফসি কাপে আবাহনীকে মাজিয়া হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচেই হারিয়েছিল। এবারও মাজিয়া ডাগ আউটে সেই কোচ মারিয়ান সেকেলোভস্কি। চেনা প্রতিপক্ষকে নিয়ে ভালো গবেষণা করেই ঢাকা এসেছে মারিয়ান, সেটা কথাতেই স্পষ্ট। স্বাগতিকদের বিপক্ষে কোনো ছাড় দিতে চায় না মাজিয়ার মেসিডোনিয়ান কোচ, ‘আমাদের টার্গেট সবসময় থাকে জেতার। নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে জয় তুলে নেওয়া। দুই সপ্তাহ আগে এক ম্যাচ হাতে রেখে লিগ জিতেছি।’ সেবার যে দলটা আবাহনীকে হারিয়েছিল সেই দলের ছয় ফুটবলার এখন বর্তমান দলে আছে। পরিচিত প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরতে চায় দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ ইরফান, ‘সবাই ডিটারমাইন্ড ম্যাচ খেলে জেতার জন্য। এখানে জয় নিয়ে গেলে আমাদের হোম ম্যাচেও অ্যাডভানটেজ পাব।’ দেখার বিষয় কে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে। একদিকে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া আবাহনী; অন্যদিকে উড়ন্ত মাজিয়া জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। সব মিলিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ যে হতে যাচ্ছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।