আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৫-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

রপ্তানি আয়ে ফের হতাশা

সাত মাসের মধ্যে পাঁচ মাসই আয় কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

হতাশা দিয়ে শুরু হয়েছে দেশের রপ্তানি খাতের নতুন বছর। গেল বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও জানুয়ারিতে ফের ধাক্কা খেয়েছে রপ্তানি আয়। এ নিয়ে গেল সাত মাসের পাঁচ মাসই নেতিবাচক ধারায় ছিল দেশের রপ্তানি আয়। গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ আয় কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইপিবির তথ্য মতে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৯২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যদিও এ সময়ে ২ হাজার ৬৩৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪২ কোটি ডলার এবং আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৬ কোটি ডলার আয় কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় আয় ছিল ২ হাজার ৪১৮ কোটি ডলার। তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। এরপর টানা চার মাস রপ্তানি আয় কমেছে। ডিসেম্বর মাসে আয় কিছুটা বেড়েছিল। এবার জানুয়ারিতে আবার কমেছে। সব মিলিয়ে অর্থবছরের সাত মাসের মধ্যে পাঁচ মাসই রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিকসহ বড় খাতগুলোর রপ্তানি কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে পুরো রপ্তানি আয়ে। এছাড়া দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কম, তাই অর্ডারও কম। এর সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। পাশাপাশি দেশের অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা রয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রপ্তানি আয় আরও কমে যাবে।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে গেল জানুয়ারিতেও আয় কমেছে। এ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। তবে এ সময় লক্ষ্য ছিল ৪২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় কমেছে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। গেল বছরের জানুয়ারিতে রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৩৬৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট রপ্তানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ শতাংশের বেশি। জানুয়ারি শেষে পোশাক রপ্তানি করে দেশের মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ কম। একই সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। এর তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমার এর প্রভাবই পুরো রপ্তানি খাতে পড়েছে।
এ খাতে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের চাহিদা কমা, শ্রমিকের মজুরি ও বেতন-ভাতা বাড়ানোর কারণে কম দামে অর্ডার নেওয়ার সক্ষমতা কমেছে তৈরি পোশাক খাতে। এজন্য রপ্তানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে সরকারের তরফ থেতে। একই সঙ্গে পোশাকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণ ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
পোশাকের পাশাপাশি অন্য বড় খাতগুলোয়ও রপ্তানি আয় কমেছে। সাত মাসে কৃষিপণ্যে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। প্লাস্টিকপণ্যে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে কম নেতিবাচকতার ভিড়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬০ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ। রপ্তানি এ আয় গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় করে বাংলাদেশ। আর চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার।