আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৫-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

ভিড় বাড়লেও বেচাকেনা কম

মামুন তুষার
| শেষ পাতা

দিন যতই এগোচ্ছে ততই জমে উঠছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে নানা আয়োজন। বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যাও। তবে বাড়েনি ক্রেতার সংখ্যা। গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিন মঙ্গলবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তবে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সোমবারের তুলনায় এদিন দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল কিছুটা বেশি। 
বিভিন্ন প্রকাশনীর কর্তাব্যক্তিরা জানান, এদিন মেলায় আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থীই বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বইয়ের মলাট উল্টেপাল্টে দেখছেন আর নতুন নতুন বইয়ের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। জানছেন দামও। তবে দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাবিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ তাদের। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় মেলা প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর আগে থেকেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বইপ্রেমীদের। বিকাল গড়াতে গড়াতে পাঠকের আনাগোনায় প্রাণের মেলা পরিণত হয় মানুষের মেলায়। এবার শুরু থেকেই লেখক প্রকাশকরা মেলায় আসছেন, আড্ডায় মেতে উঠছেন। তবে বেশিরভাগ প্রকাশকই জানালেন, বড় পরিসরে এখনও সব বই আনা হয়নি। দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পছন্দের বই মেলায় আনতে শুরু করবেন তারা। তৃতীয় দিন সরজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় এখনও কয়েকটি প্রকাশনী তাদের স্টল গোছানোর কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তারা।
বিক্রয় কর্মীরা বলছেন, শুরুর দিক হওয়ায় এখনও তেমন বই বিক্রি করতে পারেননি তারা। সাহিত্য প্রকাশনীর প্রকাশক রাকিবুল ইসলাম জানান, বেচাকেনা এখনও তেমন হচ্ছে না। তবে সময় বাড়তে বাড়তে বেচাকেনাও বাড়বে বলে জানান তিনি। বইমেলায় ঘুরতে আসা রাজধানীর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাগর রহমান বলেন, লোকের ভিড় উৎসবের আমেজ এনেছে। তবে অনেকেই চাহিদা মোতাবেক নতুন বই পাচ্ছেন না। প্রকাশকরা নির্বাচিত বইগুলো একটু দেরিতে মেলায় নিয়ে আসেন, এটা ঠিক নয়।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টার পর থেকে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের আনাগোনায় মুখর থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। বিক্রেতারা বলেছেন, মেলার শুরু থেকেই পাঠকদের আনাগোনা বাড়লেও বিক্রি তেমন বাড়েনি। তবে সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতারা। প্রতিদিনই পাঠকদের আনাগোনা বাড়ছে। বাবা-মায়ের কোলে চড়ে ও হাত ধরে হেঁটে মেলায় বই কিনতে এসেছে অনেক কোমলমতি শিশু। 
মূল মঞ্চের আয়োজন : তৃতীয় দিন মঙ্গলবার গ্রন্থমেলা চলে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় নতুন বই এসেছে ৮১টি। গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান এবং সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী। 
প্রাবন্ধিক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঐতিহাসিক পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর ‘প্রথম বিপ্লব’ অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি, ‘বাংলাদেশ বিপ্লব’ হিসেবে সর্বদাই বিবেচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী সংবিধান চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি অনুগত, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ বিশ্বাসী সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় দল গঠন করে। বঙ্গবন্ধুর এ উদ্যোগ রাজনৈতিক বিপ্লবের দ্বিতীয় ধরন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্যই তৎকালীন বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। ব্যাপক ও বিস্তৃত কর্মসূচির সার-সংক্ষেপের কারণে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন গ্রন্থটি ব্যাপক প্রচার ও পাঠ কাম্য। 
আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন গ্রন্থে তার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ও প্রেক্ষাপট বস্তুনিষ্ঠভাবে উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি তার সারা জীবনের রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ থেকে উৎসারিত যার মূলে ছিল সাম্য ও সাধারণ মানুষের মুক্তির চিন্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সব কর্মসূচিই মূলত ধাবিত হয়েছে দ্বিতীয় বিপ্লবের দিকে যার একুশ শতকীয় রূপ আমরা দেখতে পাই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণার মধ্যে। আমাদের কাজ হবে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে সামনে নিয়ে আসা এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সাম্যের আদর্শনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা। 
সভাপতির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন তুলে ধরার যে দায়িত্ব আমাদের রয়েছে তা কেবল আবেগ দিয়েই সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবনের পর্যালোচনা। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন এ জাতীয় গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাশিল্পী হাবিব আনিসুর রহমান, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, লেখক অঞ্জন আচার্য এবং শিশুসাহিত্যিক পলাশ মাহবুব। 
আজকের অনুষ্ঠান : আজ গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অজয় দাশগুপ্ত রচিত বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন কৌশল ও হরতাল শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুভাষ সিংহ রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নূহ-উল-আলম লেনিন এবং আবু সাঈদ খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।