আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৭-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

করোনা ভাইরাস পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব ফেলবে না : বাণিজ্যমন্ত্রী

মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পেঁয়াজ চীন থেকে আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
| অর্থ-বাণিজ্য

চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। দেশটি থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক বিরাজ করছে। বর্তমানে চীন থেকে খুব কম পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়টি বাংলাদেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। করোনা ভাইরাসের কারণে যদি চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধও হয়ে যায়, তাহলে পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব পড়বে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন টিপু মুনশি। এ সময় বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বাণিজ্য সচিব একটি বৈঠক করেছেন। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ের ওপর নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে দেশের বাইরে থেকে যে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে, তার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চীন থেকে আসছে। চীনের পেঁয়াজ আমাদের দেশের মানুষ পছন্দ করে না। চীন থেকে আমদানি বন্ধ হলেও পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশে বিদেশ থেকে প্রায় ২ হাজার টন পেঁয়াজ ঢুকছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আমদানি হচ্ছে মিয়ানমার থেকে। পাকিস্তান থেকে আসছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এছাড়া তুরস্ক থেকেও আসছে, আর চীন থেকে খুব কম পরিমাণ আসছে। সুতরাং, চীন থেকে বন্ধ হলেও সমস্যা হবে না। 
টিপু মুনশি বলেন, পেঁয়াজ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। পেঁয়াজ আমদানির ওপর নির্ভরশীল না থেকে চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। পেঁয়াজের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা গেলে কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। আগামী ৩ বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এর উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিতকরণ ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে। প্রতি বছর দেশের চাহিদা মেটাতে ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে। পরে বাংলাদেশ মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করছে। এখনও পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে যাতে কেউ কারসাজি করতে না পারে, সে বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আশা করি, আগামীতে এ ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। দেশের কৃষক পেঁয়াজের মূল্য বেশি পাওয়ায় এরই মধ্যে উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেছেন। পেঁয়াজ সমস্যা সমাধানে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। এক সময় গরু আমদানি করে কোরবানির ঈদের চাহিদা পূরণ করা হতো। সরকারের গৃহীত বিশেষ উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ এখন গরুর মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন আর কোরবানির জন্য গরু আমদানি করতে হয় না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আগামী তিন দিনের মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবে এফবিসিসিআই। এ প্রতিবেদনের ওপর সরকার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে কোনো সমস্যা নেই। তবে করোনা ভাইরাস সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে চিন্তার বিষয়। চীনের সঙ্গে যেসব সেক্টরে বাণিজ্য রয়েছে, বিশেষ করে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কাজ করছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে বোঝা যাবে। ব্যবসায়ীরাও বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টিপু মুনশি বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে যে সমস্যা চলছে, উভয় দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে এর প্রভাব পর্যালোচনা করে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এ সমস্যা বেশি দিন অব্যাহত থাকলে আগামী দিনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব দেশ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছে। বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে কাজ করছে।
এ মুহূর্তে চীন থেকে কোনো পণ্য আমদানি বন্ধ আছে কি নাÑ জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও পণ্য আমদানি বন্ধ হয়নি। তবে করোনা ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি হলে আমাদের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ভোগ্যপণ্য হয়তো সহজেই অন্য দেশ থেকে আমদানি করা যাবে। কিন্তু তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করা হয়, তা নিয়ে ভাবার বিষয়। কারণ এসব পণ্যের আমদানি বিকল্প দেশ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, এনবিআরের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতা ও সরকারের অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সারা বিশ্ব। তাই বিশ্বের বেশকিছু দেশ এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে নানা ধরনের সংযোগ বিছিন্ন করেছে। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হওয়ায় আতঙ্কিত বাংলাদেশও। তাই চীন ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে কৌশল নির্ধারণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।