মুলতান টেস্টে বিরাট এক ধাক্কা খাওয়ার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে দীর্ঘদিন টেস্ট খেলেনি পাকিস্তান। ২০০৩ সালের সে টেস্টের আট বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেছিল তারা। ২০১৫ সালে আবার বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে এসে ধাক্কা খায় পাকিস্তান, দারুণ খেলে একটি টেস্টে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। সময়ের হিসেবে তার পাঁচ বছর পর টেস্টে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। তবে দেশের বাইরে টেস্টে সময়টা বাজে কাটছে বাংলাদেশের, হেরেছে টানা ৮ ম্যাচে, এর ছয়টিতেই ইনিংস ব্যবধানে। ২০১৭ সালে গল টেস্টে জেতার পর থেকে হারের চক্রে পড়ে আছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও ভারত সফরে হেরেছে দুটি করে টেস্ট। ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে মরিয়া মুমিনুল হক। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট জিতে সাফল্যের ধারায় ফিরতে চান মুমিনুল, টেস্ট অধিনায়কের আশা, পাকিস্তান সফর দিয়ে ছন্দে ফিরবে বাংলাদেশ। খেলা শুরু হবে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায়।
নতুন বছরে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট রাওয়ালপিন্ডিতে। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে নতুন ফল আনার প্রত্যয় বাংলাদেশ দলের। গেল বছরটা টেস্টে খুবই বাজে গেছে বাংলাদেশের। ২০১৮ সালের শেষটায় উইন্ডিজকে ঘরের মাঠে টেস্টে ধবলধোলাই করেছিল টাইগাররা। এরপর নিউজিল্যান্ডে হার, ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে ধসে যাওয়া। ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে গিয়ে লজ্জায় ডুবেছে টিম বাংলাদেশ। সর্বশেষ সিরিজে ভারতে দুই টেস্টই তিন দিনে হেরেছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই স্বাগতিকরা জিতেছিল ইনিংস ব্যবধানে। মুমিনুলের দলের কড়া সমালোচনা করেছিলেন ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। রাসেল ডোমিঙ্গো বাংলাদেশ দলকে তাই এখনও ভালো উপহার দিতে পারেননি। রাওয়ালপিন্ডিতে তাই আরেকটি মুলতান ফিরিয়ে আনা এবং শেষ হাসি হাসাই লক্ষ্য বাংলাদেশ দলের। এ মাঠ আবার পাকিস্তান দলের জন্য অপয়া। তিনটি আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলে স্বাগতিকরা তিনটিতেই হেরেছে সেখানে। ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়া। এরপর দুই বছর পরে শ্রীলঙ্কা এবং ২০০৪ সালে ভারত পিন্ডি টেস্টে জয় তুলে নেয়। ১৬ বছর পরে রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট ফিরেছে। বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে পাকিস্তান গেছে ১৬ পঞ্জিকা বর্ষ পরে। কিন্তু মুমিনুলরা নিশ্চয় চাইবেন না এ মাঠে স্বাগতিকরা জয়ের ধারায়ও ফিরুক।
পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় টেস্ট সফরে অবশ্য ভালো অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ রান পেলেও অনভিজ্ঞ এ বাংলাদেশ দল। টপঅর্ডারে সাইফ হাসান-নাজমুল শান্ত দুইজনই টেস্ট ফরম্যাটে নতুন। বোলিং আক্রমণে এবাদত এখনও আস্থার জায়গায় আসতে পারেননি। ওদিকে রুবেল হোসেনের টেস্ট রেকর্ড ভালো নয় মোটেও। কিন্তু পুরোনো বলের দায়িত্ব নিতে হবে তাকেই। তাইজুল-আবু জায়েদদের ভালো ফর্মের সঙ্গে এবাদতরা সাড়া দিলে ভালো করার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। পাকিস্তান অবশ্য নতুন দল গড়েছে। বোলিং কিংবা ব্যাটিংয়ে খামতি নেই তাদের। মোহাম্মদ নাসিম, মোহাম্মদ আব্বাস এবং শাহীন শাহ আফ্রিদি আছেন ভালো ফর্মে। পেস অলরাউন্ডার হিসেবে ফাহিম আশরাফকে ফিরিয়েছে তারা। ওদিকে স্পিন আক্রমণে ইয়াসির শাহর সঙ্গে ফেরানো হয়েছে বেলাল আসিফকে। ব্যাটিংয়ে শান মাহমুদ, আজহার আলি, বাবর আযমরা ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছেন দারুণ পারফরম্যান্স। রাওয়ালপিন্ডির পেস-বাউন্স সহায়ক উইকেটে তাই ধুঁকতে হতে পারে বাংলাদেশের। তবে মুমিনুল হক ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পিন্ডিতে ব্যর্থহার বৃত্ত ভাঙতে চান তারা।
তবে নিবেদনে ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রস্তুতির ঘাটতি ভারতে বেশ ভুগিয়েছিল দলকে। এবারও আদর্শ প্রস্তুতি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বিসিএলের প্রথম রাউন্ডে টেস্ট দলের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স হারের বৃত্ত ভাঙার আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে অধিনায়ককে, ‘দেখুন, একসময় না একসময় তো (হারের ধারা) ভাঙবেই। এ বৃত্তটা ভাঙতে সবাই প্রস্তুত। খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে সবাই। সেদিক থেকে আমরা আশাবাদী ম্যাচটি নিয়ে।’ দেশের বাইরে দলের মতো ব্যক্তিগতভাবে সময় ভালো যাচ্ছে না মুমিনুলের। সর্বশেষ ১৫ ম্যাচে করেছেন শুধু ১২০ রান, নেই কোনো ফিফটি। বাংলাদেশও ধুঁকছে প্রতিপক্ষের মাঠে। অধিনায়কের নিজের ও দলের লক্ষ্য একই, দেশের বাইরে ভালো করা, ‘চেষ্টা করছি জিনিসটি এখান থেকে শুরু করার জন্য। সব মিলিয়ে আমরা খুব মনোযোগী আছি। আশা করছি, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।’