চীনের উহানে একটি অস্থায়ী হাসপাতালে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী- সংগৃহীত
চীন ও চীনের বাইরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মানুষের মৃত্যু এবং আক্রান্ত হওয়ার হারই যে শুধু বাড়ছে তাই নয়, এর অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রাও বাড়ছে, প্রধানত চীনের ভেতরে, এমনকি বাইরেও। এ ক্ষতি শুধু ভাইরাস সংক্রমণের কারণে নয়, বরং এর বিস্তার ঠেকানোর জন্য চীনকে বড় ধরনের আর্থিক মাশুল দিতে হচ্ছে। চীনের উহান শহর, যেখান থেকে এ সংক্রমণের সূচনা, সেখান থেকে বাইরে যাওয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উহানের জনসংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ। অবরুদ্ধ শহর এখন শুধু উহান নয়, একই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে হুবেই প্রদেশের অন্যান্য এলাকায়ও। এর ফলে ব্যবসা সংক্রান্ত সবরকম ভ্রমণ বন্ধ রয়েছে। পণ্য ও কর্মীদের যাতায়াতও বন্ধ হয়ে গেছে। ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কার কারণে বহু মানুষ এমন ধরনের কাজকর্ম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার থেকে তাদের জন্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। কাজেই রেস্তোরাঁ, সিনেমা, পরিবহন কোম্পানি, হোটেল এবং দোকানবাজার সবকিছুর ওপরই দ্রুত এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর ওপর চীনা চান্দ্র নববর্ষের ছুটির সময় এ স্বাস্থ্য সংকট দেখা দেওয়ায় এ শিল্পগুলো বিশেষ করে বড় ধরনের বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
উৎপাদনের কাজ এবং পণ্য বিক্রি বেশিদিন বন্ধ রাখলে বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকেই নানা ধরনের বিলের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি কর্মচারীদের বেতনও দিতে হবে। যেসব পণ্য নির্মাতা বিদেশে তাদের পণ্য বিক্রি করে, তাদের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে, যেটা হলো তারা চীনের কাছ থেকে পণ্য কেনায় অনাগ্রহ দেখাতে পারে। আন্তর্জাতিক পরিসরে যারা খুচরা ব্যবসা করেন, তারা চীনে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন আসবাব বিক্রির প্রতিষ্ঠান এবং কফির প্রতিষ্ঠান স্টারবাক্স। বেশকিছু বিমান সংস্থা চীনে তাদের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক হোটেল সংস্থা যারা পৃথিবীজুড়ে হোটেল ব্যবসা চালায়, তারা খদ্দেরদের তাদের হোটেল বুকিংয়ের অর্থ ফেরত দিতে চেয়েছে। এর ওপর রয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে যেসব পণ্য সরবরাহের সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চীনের ভূমিকা রয়েছে, সেগুলো নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ স্বাস্থ্য সংকটের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে শেয়ার ও অর্থবাজারেও। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। চীনা নববর্ষের ছুটির পর বাজার খোলার প্রথম দিনে চীনের বাজারে মূল্যপতনের হার ৮ শতাংশ। এছাড়া এক বছরের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। গেল দুই সপ্তাহে তেলের দাম পড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ, যা চীনে তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার প্রতিফলন। চীনের তেল শোধনাগার সাইনোপেক অপরিশোধিত তেলের আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বলে খবরে জানা গেছে। বিবিসি