আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত ‘করোনা’ নামক একটি ভাইরাস। যার উৎপত্তি চীনের ইউহান প্রদেশে; সেখানকার মাছের বাজার থেকে ছড়ায় এ ভাইরাস। এ ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে চীনে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বসম্প্রদায়। কার্যত চীন এখন বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। চীনে উৎপত্তি হলেও মারাত্মক করোনা ভাইরাস এখন শুধু আর চীনে নেই। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ তা এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ১২টিরও বেশি দেশে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নোভেল করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাস উৎপত্তির কারণ কী? কোরআন এবং হাদিসের আলোকে পৃথিবীর কোনো বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো মানুষের কৃতকর্ম। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘স্থলে ও সাগরে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা আর রুম : ৪১)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন : ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা আশ শূরা : ৩০)।
এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য কোরআন এবং হাদিসের আলোকে এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে কিছু করণীয় উল্লেখ করব :
তওবা করা : আমাদের উচিত স্বাভাবিক অবস্থাতেই বেশি বেশি তওবা করা, আর এই ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার জন্য বিশেষভাবে তওবা করা, কারণ তওবা আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন : ‘তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের ওপর আজাব দেবেন না।’ (সূরা আনফাল : ৩৩)।
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ : সুস্থ, সুন্দর এবং আদর্শ সমাজ গঠনে সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ অন্যতম একটি মাধ্যম। নবী (সা.) বলেছেন : ‘ওই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, অন্যথায় খুব দ্রুত আল্লাহ তোমাদের ওপর তাঁর পক্ষ থেকে আজাব প্রেরণ করবেন, অতঃপর তোমরা তাঁর নিকট দোয়া করবে আর তিনি তখন তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না।’ (তিরমিজি)।
দোয়া করা : আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা, যেন তিনি আমাদের এ আপদ থেকে রক্ষা করেন, কারণ তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
কিছু নির্ধারিত দোয়া
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাস স্বামামি ওয়ালবাকামি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়াল বারাসি ওয়া সাইয়্যিইল আসক্বাম।
অর্থ : হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার কাছে বধিরতা, মূকতা, উন্মাদনা, কুষ্ঠরোগ, ধবল এবং সব ধরনের কঠিন ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (স. জামে ১/৪০৬)।
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়াই ওয়াল আদওয়া।
অর্থ : হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার কাছে দুশ্চরিত্র, অসৎ কর্ম, কুপ্রবৃত্তি এবং কঠিন রোগগুলো থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। (সুনানে তিরমিজি : ৩/১৮৪; সহিহ জামে : ১২৯৮)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ বুলেটিন
- ক্যত বেশি পারেন আপনার কণ্ঠনালিকে ভিজিয়ে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই শুষ্ক হতে দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করুন। কণ্ঠনালি যদি শুষ্ক থাকে তবে মাত্র ১০ মিনিটেই আপনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
- ৫০ থেকে ৮০ সিসি হালকা গরম পানি পান করুন (বড়দের জন্য)। ৩০ থেকে ৫০ সিসি ছোটদের জন্য।
- যখনই আপনি মনে করছেন আপনার কণ্ঠনালি শুকিয়ে আসছে, অপেক্ষা না করে দ্রুত পানি পান করুন।
- সবসময় হাতের কাছে বিশুদ্ধ পানি রাখুন।
- একবারে প্রচুর পানি পান করে লাভ নেই। বরং অল্প অল্প বিরতিতে অল্প অল্প পান করে কণ্ঠনালিকে সবসময় আর্দ্র করে রাখুন।
- মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত এ নিয়মগুলো মেনে চলুন।
- জনাকীর্ণ জায়গা থেকে দূরে থাকুন।
- ট্রেন, বাস এবং যে কোনো গণপরিবহনে মাস্ক পরুন।
- ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।
- যেসব খাবারে প্রচুর ভিটামিন সি আছে সে খাবারগুলো বেশি করে খান।