রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে অভিশংসন বিচারে রেহাই পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদে টিকে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গুরুতর দুই অভিযোগে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ অভিশংসনের এ প্রস্তাব দেড় মাস আগে সিনেটে পাঠিয়েছিল। ঐতিহাসিক সেই বিচারের শুনানি শেষে বুধবার সিনেটে যে ভোটাভুটি হয়, তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত না করার সিদ্ধান্ত আসে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুটি ছিলÑ ১. প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। ২. অভিশংসনের তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে প্রথম অভিযোগ ৫২-৪৮ ভোটে এবং দ্বিতীয় অভিযোগ ৫৩-৪৮ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। কোনো একটি অভিযোগে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে দোষী সাব্যস্ত হলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হতো ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের হাতে। তবে সিনেটে ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তেমন কিছু যে ঘটবে না, তা অনুমিতই ছিল।
ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটনকে অভিশংসনের প্রস্তাব সিনেটে পাঠিয়েছিল প্রতিনিধি পরিষদ। তবে সিনেট তাদের কাউকে পদচ্যুত করেনি। তবে ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি অভিশংসনের ফাঁড়া কাটিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ভোটের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের বছরে গুরুতর অভিযোগে প্রেসিডেন্টের এ অভিসংশন দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে ট্রাম্প বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তার প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুরোপুরি নির্দোষ প্রমাণ হয়েছেন। এখন আমেরিকানদের জন্য কাজে মন দেওয়ার সময়। অকর্মা ডেমোক্র্যাটরা ভালো করেই জানেন। তারা তাকে (ট্রাম্প) হারাতে পারবেন না, সে কারণেই তারা অভিশংসনের পথে গেছেন। এদিকে গ্যালপের জনমত জরিপে এ সপ্তাহে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা উঠে এসেছে ৪৯ শতাংশে, যা তার জন্য এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
ভোটাভুটিতে যা হলো : উটাহর সিনেটর মিট রমনি ছিলেন একমাত্র রিপাবলিকান যিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের নিরাশ করেছেন অন্য দুইজন মধ্যপন্থি রিপাবলিকান সিনেটর মেইনের সুসান কলিনস এবং আলাস্কার লিসা মারকাওস্কি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা নিজের পক্ষ ত্যাগ করেননি। কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করলেও, তাদের বক্তব্য হচ্ছে সেটা অভিশংসন করার পর্যায়ে যায়নি। প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সিনেটের ১০০ আসনের মধ্য থেকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পড়ার দরকার হতো।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া : ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্যরা বলেছেন, এর ফলে ট্রাম্প আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেন। হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য সবসময় একটি ‘হুমকি’ হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং রিপাবলিকান সিনেটররা আইন না থাকার ব্যাপারটিকে সাধারণ ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছেন। সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এ যাত্রা রেহাই পেলেও সবাই জানেন তার ত্রুটিগুলো।