সেমিফাইনালে বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উল্লাস- আইসিসি
নিউজিল্যান্ড অ-১৯
২১১/৮, ৫০ ওভার
বাংলাদেশ অ-১৯
২১৫/৫, ৪৪.১ ওভার
ফল
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ৬ উইকেটে জয়ী
আঁটসাঁট বোলিংয়ে লক্ষ্যটা খুব একটা বড় হতে দেননি বোলাররা। উইকেটে বোলারদের জন্য বেশ সহায়তা থাকায় কাজটা এরপরও সহজ ছিল না। ১০১ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে সেটা সহজেই সারেন মাহমুদুল হাসান। পচেফস্ট্রুমে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে এ টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশ। যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এটি টানা নবম জয়। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির পর বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার যে কোনো ইভেন্টেই এটি প্রথম ফাইনাল বাংলাদেশের। রোববার বাংলাদেশের পয়া ভেন্যু পচেফস্ট্রুমেই ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে লড়বেন লাল-সবুজ দেশের ছেলেরা।
আল-শাহরিয়ার বা হান্নান সরকার বা মোহাম্মদ আশরাফুল, রাজীন সালেহরা আটকে গিয়েছিলেন অনেক আগেই। বয়সভিত্তিক দলের ‘সোনালি প্রজন্ম’ মুুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা অন্যতম ‘ফেভারিট’ হয়েও দেশে ফিরেছিলেন পঞ্চম হয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, ইয়াসির আলি রাব্বিরা হয়েছিলেন নবম। ২০১৬ সালে মিরাজের নেতৃত্বেই সাইফ হাসান, সাইফউদ্দিনরা আটকে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে, দেশের মাটিতে হয়েছিলেন তৃতীয়। গতবার সাইফ-হাসান মাহমুদরা ফিরেছিলেন ষষ্ঠ হয়ে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের বিশ্বকাপে তারা রাজপুত্তুর হয়ে উঠতে পারেননি বাংলাদেশের। আকবর আলি-মাহমুদুল হাসান জয়রা গড়লেন ইতিহাসÑ প্রথম বাংলাদেশ দল হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছেন তারা। শেষ দিকের ঝড়ে নিউজিল্যান্ড গিয়েছিল ২১১ পর্যন্ত, সেমিফাইনালের চাপ বা অতীত রেকর্ড হয়তো একটু চোখ রাঙাচ্ছিল। তবে মাহমুদুল হাসান জয় সেসবকে পাত্তা দিলেন না, অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে তিনি দেখালেন যে কোনো সিনিয়র লেভেলের ক্রিকেটারের মতোই স্নায়ু। করলেন সেঞ্চুরি, তাও আবার ৩২ রানে ২ উইকেট চলে যাওয়ার পর। প্রথমে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটিতে শঙ্কা কাটান মোটামুটি, শাহাদত হোসেনের সঙ্গে আরও ১০১ রানের জুটিতে স্বপ্নের দোরগোড়ায় নিয়ে গেলেন তিনি। এরপর শামীম হোসেনকে নিয়ে সারেন আনুষ্ঠানিকতা।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টস ভাগ্যটা বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। টস জিতে নিউজিল্যান্ড যুব দলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্ত যথার্থ প্রমাণ করতে শুরু থেকেই কিউইদের চাপে রাখেন বাংলাদেশের বোলাররা। নিউজিল্যান্ডের দুর্বলতার দিকটি মাথায় রেখে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণ নিয়ে আসেন আকবর আলী। অফ-স্পিনার শামীম হোসেন বল হাতে নিয়েই পান সাফল্য, প্রথম সিøপে তানজিদ হাসানের ক্যাচ হন ওপেনার রিস মারিও (১)। এরপর কিছুটা সময় স্বস্তিতে ছিল নিউজিল্যান্ড। যদিও রান তুলতে পারেনি সেভাবে। প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে কিউই যুবারা তোলেন ২৬ রান। তারা দ্বিতীয় উইকেটটিও হারায় বাংলাদেশের ঘূর্ণিফাঁদে পড়ে, ওলি হোয়াইটকে (১৮) উইকেটরক্ষক আকবরের ক্যাচ বানান টুর্নামেন্টজুড়েই দুর্দান্ত বোলিং করা বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান। বিপদে পড়া কিউইরা ধীরগতিতে ওভার পার করতে থাকে। বাংলাদেশের বোলাররাও চেপে ধরে রাখেন রানের গতি। ২১তম ওভারে এসে আরও এক উইকেট নেন শামীম। দেখেশুনে খেলতে থাকা ফারগুস লেলম্যানকে (২৪) বোকা বানিয়ে শর্ট মিডউইকেটে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান। অধিনায়ক জেসে টাসকফ উইকেটে আসার পর থেকেই স্পিনের বিপক্ষে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না। ১০ রান করা কিউই দলপতিকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন হাসান মুরাদ। তাতে ৭৪ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড। পঞ্চম উইকেটে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন নিকোল লিডস্টোন (৪৪) আর বেকহ্যাম হুইলার গ্রিনল। ১৫ ওভার ব্যাট করে ৬৭ রান যোগ করেন তারা। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। উইকেট কামড়ে পড়ে ছিলেন এ যুগল। শেষ পর্যন্ত এ জুটিটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। তার ফুলটস গতিময় এক ডেলিভারি পায়ে লেগে যায় লিডস্টোনের, আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিতে দেরি করেননি। কুইন সানডেকে (১) বোল্ড করেন হাসান মুরাদ। এরপর শরিফুলের কাটারে বোল্ড ক্রিশ্চিয়ান ক্লার্ক (৭)। তবে একটা প্রান্ত ধরে ড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বেকহ্যাম হুইলার। দারুণ খেলে হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন। কিউইদের এ ব্যাটিং ভরসা ইনিংসের শেষ পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে গেছেন। ৮৩ বলে ৫টি চার আর ২টি ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৭৫ রানে। বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি উইকেট নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। দুটি করে উইকেট শিকার দুই স্পিনার-হাসান মুরাদ আর শামীম হোসেনের।