যশোরের অভয়নগর উপজেলায় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে সফলতা পেয়েছেন এনামুল হক বাবুল। স্বল্প জমিতে ঘের করে কম খরচে মাছ চাষের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। কোটি টাকা ব্যয়ে আয় হয়েছে কোটি টাকা। সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থানের।
জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র এনামুল হক বাবুল উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামে ২০০২ সাল থেকে মৎস্য চাষ শুরু করেন। প্রতিবারই তিনি মৎস্য চাষে সফলতা দেখতে না পেলেও ২০১৯ সালে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ওই বছরে ৫২.৪৮ মেট্রিক টন পাবদা ও কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এ সফলতায় সাড়া পড়ে মৎস্য বিভাগে। এছাড়াও হেক্টরপ্রতি ১১.২৫ মেট্রিক টন পাবদা ও ৫.১০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদনের রেকর্ড গড়ে তিনি দেশের মৎস্য বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। রচিত হয় ভবদহ অঞ্চলে মৎস্য চাষে স্বর্ণযুগের অধ্যায়।
এনামুল হক বাবুল একজন সফল রাজনীতিবীদ, জনপ্রতিনিধি ও একজন মৎস্য চাষি হিসেবে এলাকায় প্রতিষ্ঠিত। মৎস্য চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় তিনি এখন মৎস্য চাষিদের কাছে অনুপ্রেরণাকারী। মাছ চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে তিনি দেশব্যাপী সাড়া ফেলেন। নিজ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলের মাছ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে নিজেই হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। দেশের বেকারত্বের বোঝা কিছুটা হলেও কমাতে সহায়তা করেছেন। গ্রাম্য অর্থনীতির অবকাঠামো উন্নয়নে স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের অর্থনীতিতে রেখেছেন অন্যন্য অবদান। এখন প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ তার কাছে ছুটে আসছেন মাছ চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি ও পরামর্শের জন্য। এছাড়াও কার্প, রুই, মৃগেল, কাতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষে সফলতায় প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগ তাকে করেছে পুরস্কৃত। হয়েছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মৎস্য চাষি।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এনামুল হক বাবুল উপজেলার আমডাঙ্গা গ্রামে ২০১৯ সালে ৩.২১ হেক্টর জমির বৃহৎ জলাকারে পাবদা-কার্প মিশ্র মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার মৎস্য প্রকল্পে স্থায়ী শ্রমিক অর্ধশতাধিক।
জানা গেছে, এনামুল হক বাবুলের মৎস্য চাষের সফলতায় প্রতিনিয়িত তার মৎস্য প্রকল্প পরিদর্শন ও পরামর্শ নিতে আসছেন বিভিন্ন এলাকার শত শত মৎস্য চাষি। তার অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওইসব মৎস্য চাষি মৎস্য চাষের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছে।
মৎস্য চাষি কামরুল হাসান, শফি কামাল, বাবুল আক্তার, গোলাম মোস্তফা ও হিরামন রায় জানান, দীর্ঘদিন মৎস্য চাষ করে সেরকম সফলতা আসেনি। কিন্তু বাবুল ভাইয়ের পরামর্শে মাছ চাষ করে আমরা ব্যাপক সফলতা লাভ করেছি। সফল মৎস্য চাষি অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল বলেন, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ করলে সফলতার মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের। বাড়বে দেশের র্অথনীতির প্রবৃদ্ধির হার। এছাড়া দেশের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করলে আয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদনের হার অনেক কম। ফলে এনামুল হক বাবুলের মতো স্বল্প পরিসরে মাছ চাষ করতে পারলে ফসল চাষের পাশাপাশি মাছ চাষে সফলতা সম্ভব। মৎস্য অফিস সব সময় মৎস্য চাষের উন্নত ও আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে চাষিদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, এনামুল হক বাবুল রাজনীতির পাশাপাশি মৎস্য চাষে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। তিনি যান্ত্রীক পদ্ধতি ব্যবহার করে অল্প জলাশয়ে কম খরছে পাবদা মাছ উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছেন। দেশের আমিষের চাহিদা পূরণসহ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এ মহতী উদ্যোগ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে কমবে বেকারত্ব।