জলবায়ু ভারসাম্য রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন, দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মাছ চাষের জন্য নদী, পুরোনো জলাশয়, ভূগর্ভের পানির স্তর রক্ষা, পুকুর এমনকি নদী ভরাট সম্পূর্ণ বেআইনি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে পুরোনো পুকুর, জলাশয় ও নদীভ রাট করাকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনাও প্রদান করেছেন। তার পরও কুষ্টিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে পশ্চিম মজমপুর পুলিশ লাইন্সের সামনে বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ সড়কের দক্ষিণ পাশে প্রায় এক একর জায়গায় থাকা দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছরের রেকর্ডকৃত পুরোনো জলাশয়টি রাতের আঁধারে বন্ধ করে বাড়ি নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। ভরাটকার্য চলাকালে এলাকাবাসী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাদ জাহান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে অবহিত করেন। তার পরও রাতে চলে ভরাট প্রক্রিয়া। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মজমপুর রেলগেট থেকে জগতী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেলের পাশে বাধার জন্য পাশের জমি অধিগ্রহণপূর্বক সেখান থেকে মাটি কেটে রেললাইনের কাজ সম্পন্ন করে। স্বাধীনতার পর ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এ দীর্ঘ জলাশয়টি এলাকার মানুষের পানির চাহিদাপূরণের পাশাপাশি পুরো পশ্চিম মজমপুর এলাকাসহ শহরের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বৃষ্টির পানি সেখানে জমা হতো। কিছুদিন পর আবদুল খালেক মিয়া ক্রয় করার পর থেকে ‘জলাশয়টি, খালেক মিয়ার পুকুর’ নামে পরিচিতি পায়। এ সময় পেশাদার জেলেরা এ জলাশয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করত। পরবর্তি সময় মজমপুর গেট থেকে পর্যায়ক্রমে জলাশয়টি কিছু ব্যক্তি ভরাট করে দোকানঘরসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা শুরু করে। এ সময় জলাশয়, পুকুর ও নদীর ভরাট রোধকল্পে কোনো আইন না থাকায় তৎকালীন প্রশাসন, পৌরসভা ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। বর্তমানে পুলিশ লাইন্সের সামনে রবিউল ইসলামের বাড়ির পূর্ব পাশে বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ সড়কের দক্ষিণ পাশ থেকে প্রায় কয়েক বিঘা জমির উপর জলাশয়ের শেষ অংশটি রয়েছে। পরবর্তিতে জলাশয়টি রেলওয়ের লিজমুক্ত করে জমির মালিকের কাছ থেকে আবদুল খালেক মিয়ার কাছে বিক্রি করে। তিনিও জলাশয় রেখে স্থানীয়দের কাছে মাছ চাষের জন্য প্রতি বছর লিজ দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি শহরের অঙ্গ শোভার মালিক বাদশা শেড ও ছাত্তার মাস্টার নামে দুই ব্যক্তি জলাশয়ের মধ্যে ৪ শতক করে ৮ শতক ক্রয় করে গোপনে মাটি ভরাটকার্য শুরু করে। প্রথমে ২০১৯ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর ওই জলাশয়টি রাতের আঁধারে ভরাটকার্য শুরু করে বাদশা শেঠ। এ সময় এলাকাবাসী বিষয়টি ঠিক পেয়ে জেলা প্রশাসক ও পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহারের কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন। এরপর থেকেই ভরাট প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার রাত অনুমান ১০টার দিকে হঠাৎ করে বাদশা শেঠ ও ছাত্তার মাস্টার বড় বড় ড্রাম ট্রাক ভাড়া করে ওই জলাশয়টি ভরাটকার্য শুরু করে। এলাকাবাসী টের পেয়ে এতে বাধা দেয়। পরে মুঠোফোনে বাদশা শেঠ এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি বলাকা বোর্ডিংয়ের মালিক সাবুর কাছ থেকে ৪ শতক জমি ও ছাত্তার মাস্টার ৪ শতক জমি ক্রয়ে করেন। তিনি জমি কিনেছেন নাকি জলাশয় কিনেছেন সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং আমি পৌরসভার মাধ্যমে ওই ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করব। এদিকে জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ ও ২০১৭ অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি ও ৫ ধারা মতে জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তনও করা যাবে না মর্মে আইন রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে জানালে তিনি বলেন, সকালে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।