চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাতক্ষীরার কুঁচে আহরণকারীরা ষ আলোকিত বাংলাদেশ
করোনা ভাইরাস আক্রমণের ফলে ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে রপ্তানি হচ্ছে না সাতক্ষীরার কাঁকড়া ও কুঁচে। ফলে কাঁকড়া ও কুঁচে আহরণ থেকে রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। দেশের কাঁকড়া ও কুঁচে ব্যবসায়ীরা চীনের আমদানিকারকদের কাছে কাঁকড়া ও কুঁচের দাম বাবদ ১৫০ কোটি টাকা পাবেন। ফলে একদিকে ব্যবসা বন্ধ, অপরদিকে পাওনা টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আড়ৎদাররা। স্থানীয় চাষিরা জানায়, সাতক্ষীরায় মিষ্টি পানির কুঁচে ও লোনা পানির কুঁচে পাওয়া যায়। মিষ্টি পানির কুঁচে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। আর লোনা পানির কুঁচে বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। হিন্দু ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মিষ্টি পানির কুঁচে খেত। তখন কম দামেই মিলত এসব। কয়েক বছর আগে চিনসহ মধ্যপ্রাচের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের কাঁকড়া ও কুঁচের ওপর ঝুঁকে পড়ে। ফলে শুরু হয় বাংলাদেশ থেকে ওইসব দেশে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি। কাঁকড়া গ্রেড অনুযায়ী বিক্রি শুরু হয়। কাঁকড়ার আকার ও গুণগত মান অনুযায়ী কেজিপ্রতি চীনে বিক্রি হতো এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। ফলে সাতক্ষীরার মানুষ কাঁকড়া চাষ ও কুঁচে সংগ্রহের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। চীনে রপ্তানির জন্য তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দুই তিন দিন পরপর পাঁচ থেকে ছয় টন কুঁচে ঢাকার উত্তরায় পাঠানো হতো। কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। দুই সপ্তাহ আগে করোনা ভাইরাস আক্রমণের ফলে ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দুই-তিন দিন পরপর ৩০ থেকে ৪০ কেজি কুঁচে তারা সংগ্রহ করে থাকেন। খরিদ্দার না থাকায় প্রতিদিন বেশ কিছু কুঁচে মারা যাচ্ছে। মারা যাওয়া কুঁচে শুকিয়ে কাঁকড়া ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ, কলবাড়ি ও বুড়িগোয়ালিনিতে। শুকনা কুঁচে কেজি প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া এলাকার কুঁচে ব্যবসায়ী সুনীল ভুঁইয়া বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে কুঁচে মজুত করে ঢাকায় পাঠান। তিনিসহ ছয়জন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কুঁচে চীনে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর বাজার থেকে যে কুঁচে তিনি কিনছেন তার বড় অংশই মারা যাচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে লোকসানে পড়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব মণ্ডল জানান, ঢাকার উত্তরার তমা এন্টারপ্রাইজ, জ্যোতি এন্টারপ্রাইজ ও জেডএল এন্টারপ্রাইজ, কাশেম ইন্টারন্যাশনাল ও সিরাজ ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি কোম্পানিতে তারা কাঁকড়া ও কুঁচে সরবরাহ করে থাকেন। ওইসব কোম্পানি মূলত চীন ও উত্তর কোরিয়াতে মাল পাঠায়। ২৫ জানুয়ারি থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকা আটকে পড়েছে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে। এত অনেকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, ২৫ জানুয়ারি থেকে কাঁকড়া ও কুঁচে চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা চীনের আমদানিকারকদের কাছে ১৫০ কোটি টাকা পাবে কাঁকড়া ও কুঁচের দাম বাবদ। একদিকে ব্যবসা বন্ধ অপরদিকে পাওনা টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন আড়ৎদাররা।