আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

পাটে রপ্তানি আয় বেড়েছে

সাত মাসে প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
| অর্থ-বাণিজ্য

 

সার্বিক রপ্তানি আয়ে হতাশা দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। বেশিরভাগ খাতের আয় কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা থেকেও বেশ পিছিয়ে রয়েছে রপ্তানি আয়। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে এ সময়ে ভালো করেছে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এ খাতে ৬০ কোটি ২৫ লাখ ডলার বা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে; যা আগের বছরে একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জানুয়ারি পর্যন্ত ফের ধাক্কা খেয়েছে রপ্তানি আয়। এ নিয়ে গেল সাত মাসের পাঁচ মাসই নেতিবাচক ধারায় ছিল দেশের রপ্তানি আয়। প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকসহ বড় আয়ের পণ্যগুলো ছিল নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে। তবে পাট খাতের আয়ে বেশ ভালোই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬০ কোটি ২৫ লাখ ডলার। এ সময়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। পুরো বছরের ৮২ কোটি ডলারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ হিসেবে সাত মাসে পুরো বছরের প্রায় এক চতুর্থাংশ আয় হয়েছে পাট খাতে। 
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, পাট খাতের প্রধান তিন ধরনের পণ্যে। কাঁচাপাট, পাট সুতা ও কুণ্ডলী এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগে ভালোই আয় হয়েছে। আলোচ্য সময়ে কাঁচাপাটে ৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ১০ কোটি ২০ লাখ ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৬ শতাংশ এবং গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে আয় ছিল ৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। পাট সুতা ও কুণ্ডলীতে ২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৭ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ শতাংশ এবং গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে আয় ছিল ৩০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। পাটের বস্তা ও ব্যাগ থেকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৭ শতাংশ এবং গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে আয় ছিল ৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এর বাইরে অন্যান্য পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। 
পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশের মানুষ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের প্রতি সচেতন হওয়ায় সেখানে পাট পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এ চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ নতুন নতুন বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বদেশী পাটপণ্যের কার্যকর ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পণ্য বৈচিত্র্যকরণে সরকারি পাটকলগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন সংযোজন করা হচ্ছে তেমনি পণ্য বৈচিত্র্যকরণে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের নগদ সহায়তা ও নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে মোট ২২টি পাটকল চালু রয়েছে এবং বেসরকারিখাতে প্রায় ২০০ পাটকল আছে।
তারা আরও বলেছেন, বিদেশি বাজারে এখন বৈচিত্র্যপূর্ণ পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে রপ্তানিও বাড়ছে। বর্তমানে পাট নিয়ে গবেষণা করে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। এসবই রপ্তানি হচ্ছে। তবে পাটজাত পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে না। যদিও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে মুনাফার হার কমে গেছে। পরিবেশ সচেতনতা ও সবুজ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পাটের তৈরি শপিং ও ফুড গ্রেড ব্যাগ, কম্পোজিট, জিও-টেক্সটাইল, পাল্প ও কাগজের বিশাল বাজার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোক্তারাও বৈচিত্র্যপূর্ণ বা অপ্রচলিত পাট পণ্য উৎপাদনের প্রতি নজর দিচ্ছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বেনিন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কঙ্গো, কোস্টারিকা, মিশর, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, জার্মানি, গুয়াতেমালা, হাইতি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইরান, জাপান, জর্দান, কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রুমানিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, সুদান, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান, তাজাখস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, উগান্ডা, গুয়াতেমালা, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করছে।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার।