বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলীর কথা শুনলে একটু ধন্দে পড়ে যেতে পারেন। এখনও ১৯ পেরোননি অথচ কথাবার্তায় কী আশ্চর্য রকম পরিণত! টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেশ ছাড়ার সময় বলে গিয়েছিলেন, ফাইনালে যাওয়া এ দলের পক্ষে সম্ভব। বয়সোচিত কারণে ‘ফাইনালে যাব’ ধরনের কথা বললে আকবরকে খুব দোষ দেওয়া যেত না। তবে আকবর যা বলেছেন, তাতে বোঝা গেল কথার চেয়ে এ অনূর্ধ্ব-১৯ দলটা কাজ করতেই বেশি পছন্দ করে। যদিও আজ ফাইনালের কাজটা দুর্গম গিরি কান্তার মরু পাড়ি দেওয়ার মতোই বাংলাদেশের জন্য কঠিন।
সেটার ১ নম্বর কারণ, প্রতিপক্ষ ভারত। এই ভারতের সঙ্গে সিনিয়র-জুনিয়র সব দলেরই স্বপ্নভঙ্গের এত এত উদাহরণ আছে, সেটার তালিকা অনেক লম্বা হয়ে যাবে। এ অনূর্ধ্ব-১৯ দলটাই গত এক বছরের মধ্যে দুইবার ফাইনালে হেরেছে ভারতের কাছে। পাঁচ মাস আগে এশিয়া কাপে নিজেদের মাঠে ১০৬ রানে ভারতকে বেঁধে রেখেও জিততে পারেনি ম্যাচ। সিনিয়র দলের তো সেই উদাহরণ আরও বেশি। গেল কিছুদিনে নিদাহাস ট্রফি, এশিয়া কাপ... ভারতের কাছে ফাইনালে শেষ বলে হারের দাগ একরকম পাকাপাকি হয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য। বরং ফাইনালে ভারতকে কীভাবে হারাতে হয়, সেটা জানার জন্য আকবররা নারী ক্রিকেট দলের রুমানা, জাহানারাদের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। এশিয়া কাপ ফাইনালে শেষ বলে ভারতের সঙ্গে ওই জয়টাই যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের একমাত্র বড় শিরোপা। আজ যুবারা জিতলে সেই গৌরবের ভাগিদার হবেন তারাও।
ভারত-জুজু তো আছেই, এ ভারত দল যেমন খেলছে, তাতে তারা নিরঙ্কুশ ফেবারিট। টুর্নামেন্টের শুররু থেকে দারুণ ফর্মে আছে তারা। গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জিতে এসেছে কোয়ার্টার ফাইনালে, সেখানেও অস্ট্রেলিয়াকে সহজে হারিয়েছে। তবে সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে যেভাবে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে, তাতে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে খুব ভালোমতো। বাংলাদেশও যে ফর্মে নেই, তা নয়। আকবর যেমন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারতের মতো তারাও অপরাজিত। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে পরিত্যক্ত ম্যাচ বাদ দিলে বাংলাদেশকে এমন কোনো কঠিন পরীক্ষাও দিতে হয়নি। মৃত্যুঞ্জয়ের মতো অলরাউন্ডার হারিয়ে ফেলার পর এখন পর্যন্ত তার অভাব খুব টের পেতে দেননি বাকিরা। এরপরও সব মিলে ভারত অনেকটা এগিয়েই মাঠে নামবে কাল। বাংলাদেশের যুবাদের তাই ফাইনালের আগে একটাই মন্ত্র মাথায় জপে জিতে হবে, এ ম্যাচে হারানোর কিছু নেই। ফাইনাল জিততে না পারলেও মাহমুদুলের কীর্তি ছোট হয়ে যাবে না। রানার্সআপ হলেও পঞ্চগড়ের গ্রাম থেকে উঠে আসা শরিফুলের সংগ্রাম মূল্যহীন হয়ে যাবে না। ফাইনালের আগে আকবরের কথায় খুঁজে পাওয়া গেল দর্শনের ছাপ, ‘আমরা এ ম্যাচটা ফাইনাল নয়, আর দশটা ম্যাচের মতোই মনে করছি। যদি ফাইনালের কথা ভাবি, তাহলে আমাদের ওপর চাপ হয়ে যাবে।’
আকবররা ফাইনালটা সাধারণ ম্যাচ মনে করে নামতে পারেন, তবে সাধারণ দর্শকদের জন্য আজকের ম্যাচটা ফাইনালের রোমাঞ্চই ছড়াবে। তাতে দোষ নেই, বাংলাদেশ-ভারতের ফাইনাল যে কোনো পর্যায়ের খেলাতেই তুমুল আগ্রহ জগাবে। তবে দিন শেষে মাথায় রাখা উচিত, এটা বয়সভিত্তিক একটা প্রতিযোগিতার ফাইনাল। এখান থেকে পথের মাত্র শুরু, শিরোপা সেই পথটা কোনোভাবেই ‘শর্টকাট’ করে দেবে না। বরং তখন কাজের সঙ্গে দায়িত্ব বেড়ে যাবে আরও। এ ফাইনালে হারুন বা জিতুন, আকবরদের বয়সভিত্তিক থেকে মূল জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার প্রক্রিয়া আগের মতোই থাকবে। যুব বিশ্বকাপে ভালো করা মানেই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুয়ার খুলে যাওয়ার গ্যারান্টি নয়। বরং আকবরদের একদম নির্ভার হয়ে তাদের মতো খেলার স্বাধীনতা দিতে হবে। আজকের ফাইনাল দিয়েই বয়সভিত্তিক বেশি এ দলের বেশিরভাগের পথচলা থেমে যাবে, আসল লড়াই শুরু হবে এরপর। আপাতত শিরোপার ভার না চাপিয়ে তাদের খেলাটা প্রাণভরে উপভোগ করতে দেওয়া উচিত। সামনে এ সুযোগ আর নাও পাওয়া যেতে পারে!