আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

‘বিশ্বকাপ জিতে তোমরা দেখিয়ে দাও’

স্পোর্টস রিপোর্টার
| খেলা

 

চার বছর আগে অল্পের জন্য ভেঙে গেছে মেহেদি হাসান মিরাজের স্বপ্ন। সে বার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের শেষ চারের লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যাওয়ায় হৃদয় ভেঙেছে বাংলাদেশের। চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল মেহেদি হাসানদের। চার বছর পরে মেহেদিদের স্বপ্ন পূরণ করার থেকে ঠিক এক কদম দূরে তাদের ‘ভাই’রা। আজ রোববার পোচেস্ট্রুমের ফাইনালে ভারতের সামনে আকবর আলীর বাংলাদেশ। ফাইনালের বল গড়ানোর আগে মিরপুর থেকে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান বললেন, “আকবর, মাহমুদুল হাসান জয়দের একটাই কথা বলব। আমরা যে কাজটা করে আসতে পারিনি, তোমরা সেটা করে দেখাও। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাও। আমরা সবাই তোমাদের দিকে তাকিয়ে।”
২০১৬ এর যুব বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাহাড় প্রমাণ চাপ নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে খেলা। সেমিফাইনালে পৌঁছেছে ‘বাংলার বাঘ’রা। আকাশে উড়তে থাকে প্রত্যাশার ফানুস। মুশফিকুর রহিম, শাকিব আল হাসানের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মেহেদিদের। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ায় সেই ‘ফানুস’টাই চুপসে যায়। সে দিনের ক্ষত এখনও শুকোয়নি মেহেদির। তিনি বলছিলেন, ‘সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় খুব আঘাত পেয়েছিলাম। ওই কষ্টটা কাটিয়ে উঠতে অনেক দিন লেগেছিল আমার। অভিজ্ঞতা থেকে জয়দের বলছি, দারুণ সুযোগ তোমাদের সামনে। জানপ্রাণ াদয়ে লড়ে যাও মাঠে।
সে বারের যুব বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিলেন মিরাজরা। তার আগে যুব বিশ্বকাপে এতো ভালো পারফরম্যান্স করেননি শাকিব আল হাসানরাও। টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন মেহেদি। যুব বিশ্বকাপে নজর কাড়ায় জাতীয় দলের দরজা খুলে যায় তার সামনে। মেহেদি বলছিলেন, ‘যুব বিশ্বকাপ এমন একটা টুর্নামেন্ট, যেখানে ভালো পারফরম্যান্স করলে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ এসে যায়। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।’  
যুব বিশ্বকাপে যেমন ‘ফুল’ ফুটিয়েছিলেন, জাতীয় দলের হয়ে শুরুতেই আলো ছড়াতে থাকেন এই অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক সিরিজে দুটি টেস্ট খেলে ১৯টি উইকেট নেন মেহেদি। চট্টগ্রামে টেস্ট জীবনের প্রথম ইনিংসে ৭টি উইকেটের পরে মিরপুরের দ্বিতীয় টেস্টে মেহেদি হাসান মিরাজ নেন ১২টি উইকেট। বাংলাদেশের ক্রিকেট তাকে নতুন তারকা হিসেবে বর্ণনা করতে শুরু করে। অথচ তার উত্থানের রাস্তাটা মোটেও পাপড়ি বিছানো ছিল না। আর্থিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়েই বেড়ে ওঠেন মেহেদি। বাংলাদেশের ক্রিকেটমহলে কান পাতলে শোনা যায়, মেহেদির বাবা চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করুন। 
বাবা চাইতেন না বলে অনেক সময়েই তিনি লুকিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। কিন্তু প্রতিভা থাকলে তাকে কি চেপে রাখা যায়? মেহেদিকেও রোখা যায়নি। অনূর্ধ্ব ১৪ টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ২৫ হাজার টাকা পান তিনি। তার পরে অনূর্ধ্ব ১৫ টুর্নামেন্টে ডাক পান। তার পর ধীরে ধীরে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে থাকেন তিনি। যুব বিশ্বকাপে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় দলের রিমোট কন্ট্রোল। বাকিটা তো আজ ইতিহাস। এখন অবশ্য চোটের জন্য জাতীয় দলে নেই তিনি। চলতি মাসের ১৪ তারিখ ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরবেন তিনি।
প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে ‘ভাই’দের খেলা দেখেছেন মেহেদি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখে তিনি বলছেন, “দলটা একটা টিম হিসেবে খেলছে। সেমিফাইনালে জয় সেঞ্চুরি করেছে ঠিকই, কিন্তু যখন যা রানের দরকার, বাকিরাও তা করে দিয়েছে। এটাই তো ভাল দিক।” কিউয়িদের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে মাহমুদুল হাসান জয় সেঞ্চুরি করেন। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ‘ডান হাতি শাকিব’ বলে ডাকা হচ্ছে। স্ট্রাইক রোটেট করেছেন। মেহেদি বলছেন, “শুধু এক বা দুজনের উপরে ভরসা করে কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনাল জেতা সম্ভব নয়। এই ভারত খুবই শক্তিশালী দল। টিম গেমের উপরে ভরসা করে যেমন খেলে এসেছে, সেই খেলাই খেলতে হবে ফাইনালে।’’ রবিবাসরীয় ফাইনালে বাংলাদেশের রণনীতি কী হওয়া উচিত? মেহেদি বলছেন, ‘অন্তত একজন পেসারকে জ্বলে উঠতেই হবে। স্পিনার দিয়ে রান আটকে রাখতে হবে। আর ব্যাট করার সময়ে মিডল অর্ডারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।’ 
ইদানিং সীমিত ওভারের ম্যাচে দুই প্রতিবেশী দেশের দেখা হওয়া মানেই বারুদে ঠাসা খেলা। রবিবারও একটা উত্তেজক ম্যাচ হবে বলেই মনে করছেন যুব দলের সাবেক অধিনায়ক। সেই ম্যাচের শেষে জয়-আকবরদের মুখে যদি খেলা করে হাজার ওয়াটের আলো, তা হলে চার বছর ধরে বয়ে বেড়ানো দুঃসহ কষ্ট ভুলবেন মেহেদি।