আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ মন্ত্রণালয়ের

অনুমতি ছাড়া বনের ভেতর অবকাঠামো

আলোকিত ডেস্ক
| প্রথম পাতা

বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে রাস্তাঘাট, রেললাইন, বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বনবিভাগের অনুমতি নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এখন সেগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। নির্মিত এবং নির্মাণ চলমান এসব অবকাঠামোয় বনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রথমে নিরূপণ করবে বনবিভাগ। এরপর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে তারা। খবর বিডিনিউজের।

সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় কী পরিমাণ রাস্তাঘাট ও বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করেছে, তার তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে সংরক্ষিত বনে কী পরিমাণ রেললাইন রয়েছে, সে তথ্য ওই বৈঠকে আসেনি।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ভেতর রাস্তাঘাট, রেললাইন ও বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। কী পরিমাণ হয়েছে তার একটি তথ্য আমরা নিয়েছি। আমাদের একটি উদ্বেগের বিষয় হলো, যে পরিমাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তাতে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অ্যাসেসমেন্ট করব। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে তার ক্ষতিপূরণ চাইব। ওই বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা শেষে এসব অবকাঠামো নির্মাণে গাছগাছালিসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মন্ত্রণালয়কে তা নিরূপণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সরকারের কোন কোন সংস্থা কী পরিমাণ ক্ষতি করেছে, তা যাচাই করে তাদের থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা না হয় তার সুপারিশও আসে বৈঠক থেকে। এমনকি বিদ্যমান প্রকল্পগুলো ‘বাইপাস’ করে বনের পাশ দিয়ে নেওয়া যায় কি না, সেই আলোচনাও হয় বৈঠকে। বৈঠকে বন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রটোকল তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। যাতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নতুন কোনো প্রকল্প তৈরির সময় সংরক্ষিত বনের বিষয়টি বিবেচনায় আনে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনারও পরামর্শ আসে ওই সভা থেকে।
সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের হাজারীখিল সংরক্ষিত বনের ভেতরে ৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। লিঙ্করোড থেকে টেকনাফ সড়কের দুপাশে সড়ক ও জনপথ রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর মৌজার ইয়াংছা থেকে জিদ্দাবাজার পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা (সওজ) করা হচ্ছে। মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনভূমির মধ্য দিয়ে অনুমোদন ছাড়াই আলীকদম-পোয়ামুহুরী পর্যন্ত ৩৭.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্থের দুই লেন রাস্তা নির্মাণ চলছে। বান্দরবানের সাঙ্গু সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে থানচি-রেমাক্রি-মদন-লিকরী ৪০-৪৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ চলছে। গাজীপুর সদর, জয়দেবপুর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ৫৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ হয়েছে। দেশের আট জেলার ২৪ উপজেলার বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে ৪৫৭ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কর্তৃক মেঘনা-মদুনাঘাট পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ চলমান। গাজীপুর সদর, জয়দেবপুর ও শ্রীপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে ১৭২ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হয়েছে। এর বাইরে পিজিসিবি সম্প্রতি গাজীপুরে দুটি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও টাওয়ার নির্মাণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েছে।
সাবের বলেন, অনেকক্ষেত্রে জানা গেছে, কিছু প্রকল্প শুরুর আগে কোনো ধরনের যোগাযোগও করেনি। তারা নিজেরাই কাজ শুরু করে দিয়েছে। একনেকে অনুমোদিত বলে তারা এটাকে বাস্তবায়ন করতে চায়। জাতীয় স্বার্থে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আমাদের কথা হলো বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থের অংশ। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন কোন স্বার্থটাকে অগ্রাধিকার দেবেন। এজন্য ওনাকে বিষয়টি তো অবহিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একনেকে পাস করার সময় বলা হয় রাস্তাটি এখান থেকে এখানে যাবে। কিন্তু ওইখানে যে সংরক্ষিত বন রয়েছে, তা কিন্তু তারা জানাচ্ছেন না। এজন্য আমরা চিন্তা করেছি। আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে একটি প্রটোকল তৈরি করে দেব এবং বলব এসব জায়গা থেকে যেন না যায়।
এখানে শব্দদূষণের বিষয়ও আছে। এজন্যও আমরা একটি প্রটোকল করে দেব। আর যদি বিশেষ বিবেচনায় করার দরকার হয়, তাহলে যেটা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আরেকটা হচ্ছে বিদ্যমান কোনো প্রকল্প বাইপাস করে বনের বাইরে থেকে নেওয়া সম্ভব কি না?