বগুড়ায় হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর গলাকাটা ও আগুনে পোড়ানো লাশের পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ৫ ফেব্রুয়ারি দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের বড়কোল গ্রামের মাঠ থেকে গলাকাটা ও আগুনে পোড়ানো এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে বিভৎস্য এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে দুপচাঁচিয়া থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের পৃথক দুটি টিম মাঠে নামে। একপর্যায়ে তিন দিনের মাথায় তারা লাশের পরিচয় শনাক্ত করে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হয়। এরই মধ্যে
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বাবা ও মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া বিপিএম (বার) তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, পরকীয়ার জেরে বাবা ও মেয়ের পরিকল্পনায় রংমিস্ত্রি সেলিম প্রমাণিককে (৩২) গলাকেটে হত্যার পর আগুনে পোড়ানো হয়। সেলিম দুপচাঁচিয়া থানার খিদিরপাড়া গ্রামের কফির উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রংমিস্ত্রি। গ্রেপ্তাররা হলেন একই গ্রামের আবদুর রহমান (৫০) ও তার মেয়ে সৌদিপ্রবাসী ইকরামুল হকের স্ত্রী রূপালী বেগম (২৪)। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কারণ এবং নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, দুপচাঁচিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম।
পুলিশ সুপার আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার সেলিম ও রূপালীর বাড়ি একই গ্রামে। পাশাপাশি বাড়ি তাদের। ছোটকাল থেকেই তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুজনেরই অন্যত্র বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর রূপালীর স্বামী সৌদি আরবে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ নিয়ে চলে গেলে সেলিম ও রূপালীর মধ্যে আবারও পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা দুজনে বিভিন্ন সময় একান্তে মিলিত হন। শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। সেলিম গোপনে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে রাখেন। একপর্যায়ে সেলিম রূপালীকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। রূপালী রাজি না হলে গোপনে ধারণ করা ভিডিও সৌদিতে রূপালীর স্বামীর কাছে পাঠান। রূপালীর স্বামী বিষয়টি রূপালীকে জানালে তিনি সেলিমকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। এদিকে সেলিম বিয়ের জন্য রূপালীকে চাপ দিতে থাকেন। বিয়েতে রাজি না হলে গোপন ভিডিওগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। অবশেষে রূপালী বিষয়টি তার বাবার সঙ্গে শেয়ার করলে বাবা-মেয়ে মিলে সেলিমকে শায়েস্তা করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি সেলিমকে ফোন করে বিয়ে করার জন্য ডেকে নেয় রূপালী। তারা পার্শ্ববর্তী এলাকায় রূপালীর বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে ভ্যানযোগে রওয়ানা দেন। তারা বাড়ি থেকে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার গিয়ে পাকা রাস্তা থেকে নেমে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বেরুজ গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই রাস্তায় ওত পেতে থাকা রূপালীর বাবা ও তিন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী রূপালী ও সেলিমকে জোর করে ধরে মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর রূপালীকে সরিয়ে দিয়ে সেলিমকে ধরে পা রশি দিয়ে বেঁধে পুরো মুখ ও মাথা স্কচটেপ দিয়ে মুড়িয়ে চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরের দিন স্থানীয় লোকজন মাঠের মধ্যে পোড়া মৃতদেহ দেখে পুলিশকে জানালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় সেলিমের বাবা কফির উদ্দিন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে দুপচাঁচিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে অভিযান চালিয়ে হত্যার রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তিন যুবককে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।