আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ৯-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বনানীর বেদেরঘাট বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড

খোলা আকাশের নিচে সহস্রাধিক মানুষ

পুড়ে গেছে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক
| প্রথম পাতা

রাজধানীর বনানীর বেদেরঘাট বস্তিতে শনিবার ভোররাতে ভয়াবহ আগুনে পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে শিশুকে নিয়ে বসে আছেন এক মা -আলোকিত বাংলাদেশ

রাজধানীর বনানীর টিঅ্যান্ডটি মাঠসংলগ্ন বেদেরঘাট বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আগুনে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বস্তিবাসী। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘরবাড়ি হারানো সহস্রাধিক অসহায় মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন বস্তির পাশে থাকা মাঠসহ খোলা আকাশের নিচে। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত তারা শুকনা খাবার পেলেও কারও কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানিয়েছেন তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও বস্তিবাসী জানিয়েছেন, শনিবার রাত সাড়ে ৩টার কিছু আগে আগুন আগুন চিৎকার কানে আসে বস্তিবাসীর। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেকের ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বেশিরভাগ বস্তিবাসীই কোনো কিছু নিতেও পারেননি। জুলহাস নামে এক বস্তির বাসিন্দা বলেন, আগুন লাগার পরপরই দমকল বাহিনী গাড়ি নিয়ে আসে। কিন্তু সবকিছু সেট করতে করতে পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। অথচ সামনে ও পেছনে ছিল খাল। পানি সরবরাহের অভাব ছিল না। তারপরও কেন এমন হলো? অনেকের চোখের সামনেই ঘরদোর পুড়ে ছাই হয়েছে। কিন্তু করার কিছুই ছিল না। বস্তির বাসিন্দা জামাল মিয়া জানান, তার ঘর থেকে ২০ ঘর দূরে ছিল আগুন। সেই দৃশ্য দেখে তিনি দ্রুত তার স্ত্রী ও সন্তানদের উদ্ধার করে বস্তির পাশে থাকা মাঠে রেখে আসেন। বস্তিতে ফিরে এসে দেখেন তার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর পর ঘরের কাছে যান; কিন্তু ততক্ষণে পোড়া অংশ ছাড়া কিছুই নেই।
বস্তিতে বসবাসকারী প্রাইভেট কার চালক কবির হোসেন জানান, তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। আগুনে তার গাড়ির লাইসেন্সও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। টিভি-ফ্রিজ, খাট-আসবাবপত্র ছাই হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আমার পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সব খোয়া গেল। শনিবার দুপুর পর্যন্ত এ দম্পতি বস্তির পাশের মাঠে সন্তানকে নিয়ে বসে ছিলেন। এক মাসের বাচ্চাকে কী খাওয়াবেন, সেই খাবারও তাদের ঘরে এখন নেই। কবিরের স্ত্রী সামলা বলেন, আমরা এখন কী খাব? কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না। এ দম্পতির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফুটপাতে শরবত বিক্রিকারী সুজন নামের একজন। তার একমাত্র অবলম্বন ভ্যানগাড়িটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কবির দম্পতি ও সুজনের মতোই আগুনে নিঃস্ব অনেক পরিবার।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার জানিয়েছেন, ভোর রাত ৩টা ২০ মিনিটে আগুনের খবর আসে। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে ২২টি ইউনিট সেখানে ছুটে যায় এবং প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে। ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় অনেকগুলো ঘর পুড়ে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও কারণ তিনি জানাতে পারেননি। 
শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, বস্তিটি পুড়ে অধিকাংশ জায়গায় কয়লা আর ছাই পড়ে আছে। অনেকের ভিড়। ক্ষতিগ্রস্তরা এ পোড়া জিনিসপত্রের ওপর দাঁড়িয়ে তাদের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র খুঁজছেন। অনেকে নিজের ঘরের পোড়া অংশগুলো সংগ্রহ করছেন। কেউ খুঁজছেন যদি পোড়া অংশ থেকে কিছু পাওয়া যায়। বস্তিবাসীর অভিযোগ, আগুন লেগেছিল মূলত বস্তির গোডাউন থেকে। সেখান থেকে বাতাসের কারণে তা দ্রুত ছড়িয়েছে। তাদের দাবি, দুই বস্তি মিলে এ আগুনে প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। এদিকে গৃহহারা বস্তিবাসীর ঠাঁই হয়েছে টিঅ্যান্ডটি কলোনির মাঠে খোলা আকাশের নিচে। তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সঠিক সময়ে এলেও সবকিছু সেট করতে বিলম্ব করায় সব পুড়ে গেছে। 
এদিকে বেলা ১১টার দিকে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন উত্তরের বিএনপির পরাজিত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এ সময় রাজধানীর বনানীর টিঅ্যান্ডটি বস্তিতে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য সরকারের মহলবিশেষকে দায়ী করেন তাবিথ। তিনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানান। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথাও বলেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, আমি বরাবরই সরকারি একটি মহল দ্বারা অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎসংযোগের কথা বলে আসছি। আশা করছি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ অগ্নি-দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদিন ফারুকসহ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর নাছির জানিয়েছেন, এখানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। আপাতত তাদের খাওয়ার জন্য খিচুড়ি-শুকনো খাবার সরবরাহ ও থাকার জন্য স্থানীয় স্কুল ও কলোনির মাঠে ব্যবস্থা করেছেন। দ্রুতই তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর থাকা-খাওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হবে।