আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

ভারতকে হারানোয় আনন্দ বেশি

জাতীয় দলে আসছে রদবদল

স্পোর্টস রিপোর্টার
| খেলা

 

এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি, বা ওয়ানডে বিশ্বকাপÑ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙার গল্প অনেক। কাছে গিয়েও ভারতকে হারাতে না পারার আক্ষেপ বাড়ছিল। পচেফস্ট্রুমে রোববার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাড়তি আনন্দ পাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বাংলাদেশের যুব বিশ্বকাপ জয় শুধু ক্রিকেট নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় অর্জনÑ মনে করেন বিসিবি সভাপতি। তার মতে, অদম্য এ দলটি শুধুই খেলার জন্য খেলে না বরং প্রতিটি ম্যাচই জয়ের জন্য খেলে। সোমবার বোর্ডে গণমাধ্যম পর্বে উচ্ছ্বসিত বিসিবি সভাপতি জানান, পরিকল্পনা করে এগোনোরা ফল এ অর্জন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন; যে কোনো ধাপেই হোক, এটা গৌরব আলাদা। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতের মতো দলকে হারিয়ে জিতেছি। ওদের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে শুধু হারছিলাম। কাজেই সবচেয়ে ভালো লেগেছে, এবার ভারতকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। টুর্নামেন্টে অপরাজেয় থাকা বাংলাদেশের ফিল্ডিংও ছিল দুর্দান্ত। ফাইনালেও ফিল্ডিংয়ের ক্ষিপ্রতায় ভারতকে আটকে দেয় আকবর আলীর দল। বোর্ড প্রধানরও আলাদা নজর কেড়েছে দলের শরীরী ভাষা, ‘ফিটনেস আর ফিল্ডিং নিয়ে আমাদের সমস্যা ছিল। এ দলটির ফিল্ডিং ছিল রীতিমতো দুর্ধর্ষ।’
৩৩ বছরের সাধনার ফল যুব বিশ্বকাপ জয়; ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে ফাইনালে দর্শক বনে গিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজরা। এর আগে এ পর্যন্তও যেতে পারেনি। গেল ২ বছর নিবিড় পরিচর্যায় তাদের গড়ে তোলা হয়। বেশির ভাগ সময় কেটেছে তাদের কখনও ইংল্যান্ডে বা নিউজিল্যান্ডে, ২৪ মাসে খেলেছে ৩০টি ম্যাচ; যা শ্রীলঙ্কা ও ভারতের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ! সেই ফসলই পচেফস্ট্রুম থেকে ঘরে উঠেছে মনে করেন পাপন, ‘এ দলটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো সেটা আমরা জানতাম। ঘাটতি বুঝে মাথায় রেখে আমরা চিন্তা করি বিশ্বকাপ শুরুর আগে পরিকল্পনা করতে আলাদা কিছু করা যায় কি না। সেভাবে পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছিল। পুরো দেশ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের সাফল্যে ভাসছে, ওদিকে আরও একটি চরম ব্যর্থতা উপহার দিয়েছে জাতীয় দল। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের কাছে ইনিংস ও ৪৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হার। গেল বিশ্বকাপ থেকে সব সংস্করণের ক্রিকেটেই বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। বৃত্ত ভাঙতে ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করছে বিসিবি, বেশ কঠিন সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেন বিসিবি সভাপতি!
মূলত হারের চেয়ে হারের ধরনই বেশি দৃষ্টিকটু। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে যেন ভয়ে কাঁপছিল তারা। সে ধারা দেখা গেল পিন্ডিতেও, চতুর্থ দিনে দেড় ঘণ্টাও টেকেনি বাংলাদেশের প্রতিরোধ। এর আগে শ্রীলঙ্কা ও ভারতে গিয়ে নাস্তানুবাদ হয়ে এসেছে দলটি, এমনকি ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটের নবীন সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষেও হেরেছে বাংলাদেশ। তাই পরিস্থিতি পাল্টাতে নিজেকে আরও বেশি জড়িত হওয়ার কথা বলেন পাপন। পাকিস্তানে টাইগারদের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি কঠিন কিছুরই ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘২ বছর ধরে বলছি, আমি এখন আর আগের মতো জড়িত না, সরে আসতে চাচ্ছিলাম। এত দিনে ওদের শিখে যাওয়ার কথা। এখন মনে হচ্ছে, সবকিছুতে জড়িত না হয়ে উপায় নেই। হতেই হবে এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।’ পাকিস্তান থেকে দল আসার পর দুই-এক দিনের মধ্যেই দলের খেলোয়াড়, কোচ ও ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন পাপন। এরপর চেষ্টা করবেন টানা ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করার। কেন কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছেন ব্যাখ্যা দিলেন সভাপতি, ‘পাকিস্তানে যা হয়েছে, দুঃখজনক। বিশ্বকাপ পর যতগুলো খেলা হয়েছে, কোনোটাই আগের সঙ্গে মিল পাই না। তাদের মনোভাব, দেহ ভঙ্গিমা, খেলা কোনো কিছুই আগের মতো মনে হয় না! এটা আলাদা। এটা নিয়ে বসে থাকব না, কাজ করতেই হবে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ, ত্রিদেশীয়, আফগানিস্তান সিরিজের পর পাকিস্তানের সঙ্গেও একই কথা। এমনকি ভারতের সঙ্গেও। যত দিন যাচ্ছে, উন্নতির কোনো লক্ষণই দেখছি না।’
জানা গেছে, টানা ব্যর্থতায় জাতীয় দলে ব্যাপক রদবদল হতে পারে, বদল আসতে পারে নেতৃত্বেও। কোচিং স্টাফ ও ম্যানেজমেন্টেও পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। এসব বিষয়ে খুলে বলেননি পাপন। আপাতত বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাফল্য নিয়ে ভাবছেন তারা। দুই-তিন দিন পরই এ নিয়ে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি।