আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১১-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

হারিয়ে যাবেন না আকবররা

স্পোর্টস রিপোর্টার
| খেলা

যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

সাল পজিশন চ্যাম্পিয়ন ভেন্যু

১৯৮৮ খেলেনি অস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলিয়া

১৯৯৮ নবম ইংল্যান্ড দ. আফ্রিকা

২০০০ দশম ভারত শ্রীলঙ্কা

২০০২ ১১তম অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড

২০০৪ নবম পাকিস্তান বাংলাদেশ

২০০৬ পঞ্চম পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা

২০০৮ সপ্তম ভারত মালয়েশিয়া

২০১০ নবম অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড

২০১২ সপ্তম ভারত অস্ট্রেলিয়া

২০১৪ নবম দ. আফ্রিকা আমিরাত

২০১৬ তৃতীয় উইন্ডিজ বাংলাদেশ

২০১৮ ষষ্ঠ ভারত নিউজিল্যান্ড

২০২০ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দ. আফ্রিকা

পচেফস্ট্রুমে রোববার দুর্দান্ত বোলিং করে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে ১৭৭ রানে অলআউট করে বাংলাদেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার চওড়া করে দিয়েছিলেন শরিফুল, সাকিব, অভিষেক, রকিবুলরা। ব্যাটিংও ভালো শুরু করেন লাল-সবুজ যুবারা, দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান এনে দেন দুরন্ত সূচনা, ৮.৫ ওভারে ৫০ রান। এর পরই ছন্দপতন, লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণয় ১৫ রানের মধ্যে চার ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান। ৪১ ওভারে ৭ উইকেট খুইয়ে ১৬৩ রান তোলার পর বৃষ্টি নেমে বাংলাদেশে ‘বিশ্বসেরা উৎসব’ শুরু বিলম্ব করে, তবে ভাসিয়ে নিতে পারেনি, পারতও না। কারণ, বৃষ্টি আইনে ততক্ষণে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ৪১ ওভারে ডাকওয়ার্থ লুইসে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৪৫ রান। খেলা আবার শুরু হলে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ বলে ৭! আকবর আলী (৪২*) ও রকিবুলরা (৭*) ছয় বলেই তুলে নেন ওই রান। সুশান্ত মিশ্রের করা ৪২তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে রকিবুলকে স্ট্রাইক দেন আকবর; পরের দুটি বল ডট দিলেও চতুর্থ বলে চার মারেন রকিবুল, পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে টাই করেন; ওভারের শেষ বল মিডউইকেটে ঠেলে দিয়ে ১ রান নিলে পচেফস্ট্রুম হয়ে ওঠে একখণ্ড বাংলাদেশ। ক্রিকেট তো বটে, দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে কোনো পর্যায়ে সর্বোচ্চ সাফল্য আসে যুব ক্রিকেটারদের হাত ধরে।
যুব বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, ট্রফি নিয়ে বুধবার বিকালে দেশে ফিরবেন আকবর আলীরা। তবে জাঁকজমকপূর্ণ কোনো আয়োজন থাকছে না যুবাদের জন্য! বিসিবিতে গণমাধ্যম পর্বে কারণও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও ক্রিকেটারদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার তাড়নায় আপাতত বড় আয়োজন করা হচ্ছে না। ঢাকায় এমনিতে ট্রাফিক জ্যাম বেশি, বিশেষ কোনো অতিথি এলে বিমানবন্দর এলাকায় আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেয়, হাঁটা দায়! বিশ্বজয়ী যুবাদের আগমনে বড় আয়োজন করলে বিমানবন্দর এলাকায় জটলা বেধে যাবে। তাই প্রথম দিনে যুবাদের সাদামাটা অভ্যর্থনা দিয়ে একাডেমিতে আনার পর পরবর্তীতে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি, ‘বুধবার যে প্রোগ্রামটা আমরা করছি, সাধারণ; সকালে (পরিবর্তীত সূচিতে বিকালে আসবে) যখন ওরা আসবে, আমরা সবাই বিমানবন্দর যাব ওদের অভ্যর্থনা দিতে। এ ক্রিকেটাররা অনেকে বড় সেক্রিফাইস করেছে, যেটা আমরা সচরাচর দেখি না। ওরা প্রচুর কষ্ট করেছে। যতটুকু বুঝতে পেরেছি, সবাই এখন বাড়ি যেতে চায়, পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চায়।’ যোগ করেন, ‘একটা জিনিস আমরা চিন্তা করেছি, বিমানবন্দর এলাকায় ট্রাফিক কিন্তু এমনিতেই খুব খারাপ এবং ওখানে তো যাত্রীরা আসা-যাওয়া করে। তাই ওখানে বিশাল কিছু করতে গেলে পুরো জায়গাটায় জ্যাম হবে, এটা একটা কারণ। তো আমরা হয়তো কিছু করব, আটকাতে পারব না। তবে যতটুকু কমানো যায়। ওদের অভ্যর্থনা দিয়ে নিয়ে আসব বিসিবি একাডেমিতে। ফ্রেশ হবে, দুপুরে একসঙ্গে লাঞ্চ করব। তারপর সংবাদ সম্মেলন করে ওদের ছেড়ে দেব।’ শেষ পর্যন্ত পাপনের বর্তমান পরিকল্পনাতেও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ, বুধবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে যুবাদের দেশের মাটিতে অবতরণ করার কথা থাকলেও তা পরিবর্তিত হয়েছে, বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে ফিরছেন আকবররা। তাই যুবাদের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের পরিবর্তে নৈশভোজ করতে হতে পারে বিসিবি কর্তাদের।
প্রায় ২ বছর ধরে বিশ্বজয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ যুব দল, এর ফলও পেয়েছে তারা। এবার তাদের লক্ষ্য কী? তাদের নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনাই বা কী? প্রতিটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরই এসব প্রশ্ন উঠে আসে। কেন না, এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় তরুণের অল্প কমসংখ্যকই টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। বিশ্বজয়ী যুবাদের হারাতে দিতে চায় না বিসিবি, তাদের ধরে রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা করছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি কার্যালয়ে গণমাধ্যম পর্বে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘এটা একটা বিরাট সমস্যা। এটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি প্রায় আড়াই বছর ধরে। কয়েকটা ছেলে খুব ভালো করল, কিন্তু ওরা তো এখনই জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছে না। তো এখন ওরা করবেটা কী?’ তবে ঠিক কী ধরনের পরিকল্পনা করেছেন তা এখন নয়, যুবারা দেশে ফিরলেই জানাবেন পাপন, ‘যদি ওদের হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ক্যাম্পে দিই, ওখানে দেখা যায়, যারা জাতীয় দলে ছিল আগে বা যারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে, তারা যাচ্ছে। তরুণরা কিন্তু ঢুকতে পারছেন না। আস্তে আস্তে এ খেলোয়াড়দের হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে এবং অনেকে হারিয়ে গেছেনও। সেজন্য আমরা ওদের নিয়ে পরিকল্পনা করেছি, আগে থেকেই করা আছে। কিন্তু কী করব সেটা আজকে (সোমবার) বলব না। ওরা বুধবার ঢাকা পৌঁছালে আপনাদের জানাব।’
বিশ্বের প্রায় সব ক্রিকেট দলের মূল খেলোয়াড়রা উঠে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে। বর্তমান বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে যারা পরিচিত, তাদের প্রায় সবাই, যেমনÑ ভারতের বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন, ইংল্যান্ডের জো রুটরা উঠে এসেছেন ছোট মঞ্চের বিশ্বকাপ থেকেই। বাংলাদেশেরও মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের মতো তারকারা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। কিন্তু ঝরে যাওয়ার সংখ্যাও তো কম নয়।
২০০৮ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক সোহরাওয়ার্দী শুভ কিছুদিন জাতীয় দলে খেললেও এখন ব্রাত্য। ২০১০ সালের অধিনায়ক মাহমুদুল হাসানকে তুমুল সম্ভাবনাময় ধরা হলেও জাতীয় দলের ধারেকাছেও আসতে পারেননি। ২০০৪ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া আশিকুর রহমানকে তো খুঁজেই পাওয়া যায় না। এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। অনেকেই ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন বহু আগেই। তাই আকবর-রকিবুলদের নিয়ে সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে বিসিবি।