আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের যা কিছু উজ্জ্বল, তার মধ্যে ক্রিকেট বলা যায় শীর্ষস্থানীয়। রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে রচিত হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন ইতিহাস। আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত যুবদলকে ২৩ বল হাতে রেখে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। যে কোনো পর্যায়ে এটাই প্রথমবার কোনো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলল বাংলাদেশ, যেখানে প্রথমবারই তুলে ধরল সোনালি ট্রফি। আর এই ট্রফি জয়ের আনন্দে ভাসছে দেশবাসী। দেশের সোনার ছেলেদের নিপুণ ক্রিকেটশৈলীতে আমরাও উল্লসিত। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।
বোঝাই যাচ্ছে, এক পা-দুই পা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন অনেক এগিয়ে গেছে। সুদূর ১৯৯৭ সালে আকরাম-বুলবুলদের হাত ধরে আইসিসি ট্রফি জিতে যে স্বপ্নের সূচনা হয়েছিল, সে স্বপ্ন ক্রমে ক্রমে বাস্তবের পথে হাঁটছে। টাইগাররা যখন ব্যাট-বল হাতে মাঠে নামে, তখন বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে থাকে চোখ-কান খোলা রাখে। আর প্রতিটি বাঙালির মনেই থাকে উত্তেজনা ও শিহরণ। তাই বলা যায়, বিশ্বকাপ জয়ের এ দিনটি ক্রিকেটের বাইরেও বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন ও ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য, ২০১৯-এর বিশ্বকাপ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল যে দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, সেখানে এ জয় বড় ধরনের আশার আলো হয়ে সামনে এলো। অনেকের মনেই সংশয় দেখা দিয়েছিল, মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক-তামিম বা মাহমুদুল্লাহর ধারাবাহিকতায় নির্ভরযোগ্য নতুন খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে কি না তা নিয়ে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এ বিজয় তাদের সে সংশয় দূর করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, অনেক দেশই যুব ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু তারা পরে ঝরেও গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করেন, যুব বিশ্বকাপে প্রতিভা চিহ্নিত করা গেছে। এখন এই প্রতিভাদের ফেরত নিয়ে যেতে হবে যেখান থেকে তারা উঠে এসেছে। কঠোর পরিশ্রম করাতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনুশীলন দিয়ে তৈরি অবস্থায় তাদের নিয়ে আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। লক্ষণীয় বিষয়, ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শীর্ষ ১৫টি দলীয় ইনিংসের একটিও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নয়। সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় প্রথম ১৪ জনে বাংলাদেশের যুবাদের একজনও নেই। বোলিংয়ে অবশ্য একটু ওপরের দিকেই আছে রকিবুল হাসানের নাম। তবে ১২ উইকেট নিয়েও শীর্ষ পাঁচে জায়গা মেলেনি এই বাঁহাতি স্পিনারের। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ও ইনিংস সেরা বোলিংয়েও সবার ওপরে নেই বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়। তবু ২৪ দিনের টুর্নামেন্ট শেষে শেষ হাসিটা হাসল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলই। সবশেষে ক্রিকেটটা যে দলীয় খেলা, সেটারই প্রমাণ দিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। এই দলীয় পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল যে সাফল্য অর্জন করেছে এর ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা। হ