খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) এর ৫৬তম উরসে বক্তারা বলেন, আলহাজ খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) এর দর্শনের মূলকথা ছিল মানবতা। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক ও মহান সুফি সাধক। তিনি বাঙালি মুসলমানদের অহংকার এবং তার কালের আলোকিত এক সূর্যস্নাত মহাপুরুষ। বক্তারা বলেন, হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) ছিলেন আমাদের জন্য রোল মডেল। কারণ তিনি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অবিভক্ত বাংলায় শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ ও রাসুলের সব আদেশ-নিষেধ অনুসরণ করে হয়েছেন পিরে কামেল। আমার জীবনধারা, ভক্তের পত্রসহ অসংখ্য রচিত গ্রন্থে তিনি লিখেছেন ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের অমীয় কথা। মুসলিম রেনেসাঁর অগ্রদূত হয়েও তিনি সব সময় অসাম্প্র্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তার মত ও পথ ছিল আদর্শিক। তাই আমরা যদি পির কেবলার লিখিত গ্রন্থাবলি ও বাস্তব জীবনে যে কর্মকাণ্ড করে গেছেন তার কিছুটা হলেও পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন অনেক সার্থক হবে।
হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) এর উরস উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলার নলতা মোবারকনগরে পবিত্র জন্মভূমিতে তিন দিনব্যাপী ৫৬তম পবিত্র উরস শরিফ আজ সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। মোনাজাত পরিচালনা করবেন নলতা শরিফ শাহী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ মাওলানা মো. আবু সাঈদ (রংপুরী)। সোমবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত মিশন অফিসের সামনে পুরুষ এবং নির্মাণাধীন আহ্ছানিয়া মিশন জামে মসজিদের স্থানে মহিলাদের জন্য উরস শরিফের মাঝের দিনের রান্না করা তবারক বিতরণের পর বিকালে পাক রওজা শরিফ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় মাহফিল অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পিরভক্ত, মুরিদ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নলতায় উপস্থিত হয়েছেন। খ্যাতনামা আলেমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে বক্তব্য রাখেন। বাদ ফজর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পাক রওজা শরিফে সাবেক অতিরিক্ত সচিব আলহাজ ডা. মো. খলিল উল্লাহর সভাপতিত্বে হজরত গফুর শাহ (রহ.) জীবনাদর্শ সম্পর্কে আলোচনা করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক আলহাজ ড. কাজী এহছানুর রহমান। কেন দরবার শরিফে এলামÑ সে সম্পর্কে আলোচনা করেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আলহাজ এএফএম এনামুল হক। ভক্তের পত্র থেকে পাঠ করেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম। মুর্শিদি পাঠ করেন মো. আমিরুল ইসলাম, মো. কামরুল ইসলাম বাবলু ও মো. রবিউল ইসলাম। কোরআন খতম ও তাওয়াল্লাদ শরিফ পরিবেশন করেন হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান। কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মো. শাহাদাত হোসেন, কেয়াম পরিবেশন করেন হাফেজ মো. মনিরুল ইসলাম। শেজরা শরিফ পাঠ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন আলহাজ হাফেজ মো. শামছুল হুদা। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মিশনের সাবেক সভাপতি আলহাজ মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহর সভাপতিত্বে বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করেন আলহাজ মাওলানা আশরাফুল ইসলাম আজিজী, আলহাজ হাফেজ মো. শামছুল হুদা, আলহাজ মো. মুজিবর রহমান, মো. আনিছুর রহমান, মো. রবিউল ইসলাম ও মো. শাহীন আলম।
বাদ আসর থেকে মাহফিল মাঠে যেসব প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরামরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে ওলি-আউলিয়াদের জীবনদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করেন, তারা হলেনÑ হাফেজ মাওলানা ওয়ালীউল্লাহ আশেকী, আলহাজ মাওলানা মিজানুর রহমান শাহপুরী, আলহাজ মাওলানা মো. আবু সাঈদ (রংপুরী), আলহাজ হজরত মাওলানা আল্লামা মুফতি আবদুল মজিদ, আলহাজ মাওলানা মো. আশরাফুল ইসলাম আজিজী, মাওলানা মো. নূরুল ইসলাম, মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মো. রবিউল ইসলাম (উত্তর শ্রীপুর) প্রমুখ। বাদ আসর থেকে ভোররাত ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন পর্বে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সহসভাপতি আলহাজ কাজী রফিকুল আলম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আলহাজ ডা. মো. খলিল উল্লাহ, নলতা শরিফ শাহী জামে মসজিদের খতিব আলহাজ মাওলানা মো. আবু সাঈদ, আলহাজ ডা. মো. আবুল কাশেম, আলহাজ মো. মুনসুর আহমদ, শিক্ষক ও হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান।
বাদ আসর নলতা শরিফ শাহী জামে মসজিদে ৫৬তম বার্ষিক উরস শরিফের সুবিধা-অসুবিধা ও ১৫ মার্চ ২০২০ মিশন প্রতিষ্ঠার ৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শাখা মিশন কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলহাজ এএফএম এনামুল হক ও প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলহাজ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপির সভাপতিত্বে (রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত) আলহাজ মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, আলহাজ মুফতি মুহাম্মদ নাজমুস সায়াদাত ফয়েজী, আলহাজ অধ্যাপক হাফেজ হাফিজুর রহমান, মুফতি শাইখ মোহাম্মদ উসমান গনী, মুফতি মাওলানা মো. আলমগীর হুসাইন সাইফী, হাফেজ মাওলানা মো. কামরুজ্জমাান (পারুলিয়া), আলহাজ মাওলানা অধ্যক্ষ শফিউল্লাহ হাবিবি, কারি মো. শামছুর রহমান, হাফেজ মো. আবু সাঈদ, মো. ওবায়দুর রহমান, মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিকাল থেকে ভোররাত পর্যন্ত আরও যারা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেনÑ মিশনের সাবেক সভাপতি আলহাজ মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহ, প্রকৌশলী ড. কাজী আলী আজম, আলহাজ ড. আবু তৈয়ব আবু আহমদ, আলহাজ আবুল ফজল, আলহাজ ডা. মো. আকবর হোসেন, হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
পবিত্র উরস শরিফের দ্বিতীয় দিনে মাহফিলে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপির সভাপতিত্বে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মো. মনসুর আহমেদ, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ কাজী রফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সহসভাপতি আলহাজ ড. কাজী আলী আজম, আলহাজ আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ এনামুল হক খোকন, অর্থ সম্পাদক মো. আনাওরুল হকসহ কেন্দ্রীয় ও দেশ-বিদেশ থেকে আগত হাজার হাজার ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকাল ৯টার সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে নলতা শরিফে ৫৬তম বার্ষিক উরস শরিফের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালায় স্ববান্ধবে উপস্থিত হয়ে বার্ষিক উরস শরিফ সফল ও সার্থক করার জন্য উরস শরিফ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও নলতা পাক রওজা শরিফের শ্রদ্ধেয় খাদেম আলহাজ মৌলভি আনছার উদ্দিন আহমদ সবাইকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এদিকে শুরু থেকেই উরস প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠের এক কোনায় ছিল পুলিশ কন্ট্রোল রুম। পুলিশের পাশাপাশি ডিবির একটি স্পেশাল টিম। এলাকাজুড়ে চারপাশে একাধিক সিসি ক্যামেরা। তাছাড়া মাঠের চারপাশে বিভিন্ন বিকিকিনির সঙ্গে ছিল খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) এর জীবন ও কর্মের প্রদর্শনী। কিছু স্টলে তার রচনাবলির সঙ্গে উঠে আসে সে সময়কর বিভিন্ন দুর্ভল ছবির প্রদর্শনী। পাক রওজা শরিফের চতুর্দিকে নানা ফুলের শোভাবর্ধন ও নলতা শরিফ এলাকা দৃষ্টিনন্দন সজ্জিতকরণের জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে দীর্ঘ রাত অবধি ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। নলতা শরিফে এখন বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তিন দিনব্যাপী ২৪ ঘণ্টা সমগ্র অনুষ্ঠান ক্যাবল অপারেটর সাতক্ষীরা ভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।