সৃজনশীল বইয়ের সিংহভাগ প্রকাশিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। জনপ্রিয় এবং পুরোনো লেখকদের পাশাপাশি নতুন লেখকরা প্রথাগতভাবে তাদের বইটি প্রকাশ করেন গ্রন্থমেলায়ই। আর বই এমন একটা জিনিস, যার প্রতি আকর্ষণ কোনোদিন শেষ হয় না। তাই নতুন বই প্রকাশিত হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ করতে ব্যাকুল হয়ে পড়ে বইপ্রেমীরা। এজন্য নতুন বই খুঁজতে গ্রন্থমেলায়ই আসেন পাঠকরা। এবারের গ্রন্থমেলায় এখন পর্যন্ত নতুন বই এসেছে ১ হাজার ১৩৬টি। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কবিতার বই। এরপরই রয়েছে উপন্যাস। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ছোটগল্পের বই। বাংলা একাডেমি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, গ্রন্থমেলায় সোমবার নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে ১৭৯টি। এ নিয়ে এবারের নতুন বইয়ে ব্যাকুল
মেলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৯টি নতুন বই প্রকাশিত হলো। এর মধ্যে কবিতার বই ৩২৮টি, উপন্যাস ২০৭টি এবং গল্পগ্রন্থ ১৪২টি, শিশুতোষ ৫২টি, গবেষণা গ্রন্থ ২২টি, ছড়ার বই ১৯টি, ভ্রমণ ১৮টি, সায়েন্স ফিকশন ২৬টি, অভিধান ২টি, অন্যান্য বিষয়ে এসেছে ৬৫টি নতুন বই। গ্রন্থমেলায় এসেছে এএএম জাকারিয়ার গল্পগ্রন্থ ‘গল্প বলা’। এখানে মোট ২২টি গল্প স্থান পেয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশন।
অন্যবারের তুলনায় পরিসর বাড়ানোয় এবারের মেলা অনেকটা পরিপাটি আর নান্দনিক। বাহ্যিক পরিপাটির পাশাপাশি মেলায় নতুন প্রকাশিত বইয়ের মানের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া হোকÑ এমনটাই চায় সচেতনমহল। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তরুণ প্রজন্মের পাঠকদের মুখে এ সুরই শোনা গেছে। তরুণ পাঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূর হোসেন ইমন বলেন, নতুন প্রকাশিত বইয়ে লেখার মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে কাগজের মান, প্রচ্ছদ, ছাপা, সম্পাদনা, বানানসহ অন্য বিষয়গুলোর প্রতিও অনেক মনোযোগ দেওয়া উচিত প্রকাশকদের।
ইডেন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রাফিয়া মেহজাবিন বলেন, গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক নতুন বই প্রকাশের কারণে মানহীন বই আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। গ্রন্থমেলা এলে বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বছরব্যাপী একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী বই প্রকাশ হলে মানহীন বই প্রকাশের হার অনেকাংশে কমে আসত। যেরকমই হোক বা যেভাবেই হোক, গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশ করা চাইÑ এরকম মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
মূল পর্বের আয়োজন : সোমবার গ্রন্থমেলার নবম দিন মেলা চলে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় দিব্যদ্যুতি সরকার রচিত বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ভিসি রাশিদ আসকারী। আলোচনায় অংশ নেন অ্যাডভোকেট সাহিদা বেগম ও ড. আশফাক হোসেন। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন দিব্যদ্যুতি সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, গণমানুষের মুক্তি-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে পৃথিবীতে যে ক’জন হাতেগোনা মানুষ কায়েমি শোষকদের অধীনে দীর্ঘ কারাভোগ করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম। পাথরের দেওয়াল এবং লোহার গরাদ অতিক্রম করে তিনি একটি স্বাধীন দেশ স্থাপন করেছেন পৃথিবীর মানচিত্রে। লেখক দিব্যদ্যুতি সরকার বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ কারাজীবনের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় বঙ্গবন্ধুর নানাবিধ সত্তা; যেমন মানুষ বঙ্গবন্ধু, রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু, লেখক বঙ্গবন্ধু ইত্যাদি বিষয় আবিষ্কারের প্রয়াস পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর বৈচিত্র্যময় কণ্টকাকীর্ণ জীবনের এক দুর্যোগপূর্ণ অধ্যায় তার কারাজীবন, সমকালীন ইতিহাসের আলোয় তার বয়ান এবং অন্তর্বয়ান আলোচ্য গ্রন্থকে মুজিব জন্মশতবর্ষের এ সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক।
আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময়ই কারাগারে কাটিয়েছেন। আত্মত্যাগী এ মহান নেতার আপসহীন সংগ্রামের কারণেই বাঙালি আত্মপরিচয়ের সংকটকে কাটিয়ে বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। লেখক দিব্যদ্যুতি সরকার তার রচিত বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ বৈচিত্র্যময় কারাজীবনের অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে এ গ্রন্থ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হলে তার জেল জীবনের প্রেক্ষাপট এবং অভিজ্ঞতাও আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। বারবার কারাবরণ ও আপসহীন সংগ্রামের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের উত্তরণ ঘটে এবং তিনি গণমানুষের আশা-ভরসার প্রতীকে পরিণত হন। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের পটভূমিতে রচিত দিব্যদ্যুতি সরকারের বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন গ্রন্থটিতে জাতির পিতার জীবন ও ভাবনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে, যা এ মহান বাঙালির সামগ্রিক মূল্যায়নে ভূমিকা রাখবে। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি টোকন ঠাকুর, কবি সৈয়দ তারিক, কথাশিল্পী সাগুফতা শারমীন তানিয়া এবং কবি আখতারুজ্জামান আজাদ।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মোহাম্মদ আলী খান রচিত ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আতাউর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শ্যামসুন্দর সিকদার ও ইকরাম আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফজলে কবির।