ঝালকাঠি আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হায়দার হোসাইন হত্যা মামলায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য আবেদন) গ্রহণ এবং আসামিদের আপিল, জেল আপিল খারিজ করে দিয়ে এ রায় ঘোষণা করেন। যাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে, তারা হলেন বরগুনার বেল্লাল হোসেন, আবু শাহাদাৎ মো. তানভীর ওরফে মেহেদী হাসান, খুলনার মুরাদ হোসেন, ঢাকার ছগির হোসেন ও আমীর হোসেন।
আদালতে ডেথ রেফারেন্সের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। এ ছাড়া আসামি মুরাদ হোসেনের পক্ষে এসএম মাহবুবুল ইসলাম, আমীর হোসেন পক্ষে এসএম শাহজাহান, ছগির হোসেন পক্ষে আইনজীবী মো. কামাল শুনানি করেন। আর জেল আপিলকারী আসামি বেল্লাল হোসেন ও মো. তানভীরের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী মো. আসাদুর রহমান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ জানান, মৃতুদণ্ড বহাল থাকা পাঁচ আসামি নিষিদ্ধ জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। এর মধ্যে পলাতক বেল্লাল হোসেন ছাড়া আসামি মুরাদ, ছগির ও আমীর হোসেন আপিল এবং আসামি তানভীর জেল আপিল করেছিলেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সাক্ষ্য পর্যালোচনা ও মামলার দালিলিক প্রমাণাদি বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট পিপি হায়দার হত্যায়
বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। এখন আসামিরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সাজা কার্যকর করা আটকে যাবে বলে জানান এ আইন কর্মকর্তা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আসামিদের সঙ্গে কথা বলে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঝালকাঠি আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির হায়দার হোসাইন ঝালকাঠিতে জেএমবির আত্মঘাতী হামলায় দুই বিচারক নিহত হওয়ার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। ওই মামলা পরিচালনার সময়ই হায়দার হোসাইনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল জেএমবি। দুই বিচারক হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের ২৯ মে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমানসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তাদের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০০৭ সালের ২১ মার্চ।
এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল জেএমবির জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন হায়দার হোসাইন। এ ঘটনায় হায়দার হোসাইনের ছেলে তারিক বিন হায়দার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ঝালকাঠি থানায় হত্যা মামলা করেন। তিন বছর তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি জেএমবির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিম আদালত ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য বরিশালের দ্রুত বিচার আদালতে পাঠান। ২০১১ সালের ২৬ জুন দ্রুত বিচার আদালত মামলাটি ঝালকাঠির আদালতে ফেরত পাঠান। ২০১১ সালের ১২ জুলাই ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির পুনর্বিচার শুরু হয়। একই দিন মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর ২০১৫ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুল হালিম জেএমবির পাঁচ সদস্যের ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন।