আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বায়ুম-লে স্রষ্টার অপার কারিশমা

আবদুল্লাহ মুসাফির
| প্রকৃতি ও পরিবেশ

মহান সৃষ্টিকৌশলী আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টিসেরা মানবজাতিকে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে মাতৃগর্ভের সুরক্ষিত আধারে যেভাবে লালন-পালন করেছেন, সেভাবেই ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পৃথিবীর পৃষ্ঠে একটি সুরক্ষিত ছাদ তৈরি করে মানবজাতিকে বসবাস করার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে লালন-পালন করে চলেছেন। পৃথিবীপৃষ্ঠের এ সুরক্ষিত ছাদ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এবং তিনি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলেন প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলেন সুরক্ষিত।’ (সূরা সিজদাহ : ১২)। সূরা আম্বিয়ার ৩২নং আয়াতে বলেন, ‘এবং (নিম্ন) আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ।’
আল্লাহ তায়ালা এ ‘সুরক্ষিত ছাদ’ বলতে কী বুঝিয়েছেন এবং এর কী কাজ, পৃথিবীর জন্য এর কি কোনো ভূমিকা রয়েছে অথবা পৃথিবীবাসীর জন্য এর কী গুরুত্ব রয়েছে এবং এর বিজ্ঞানভিত্তিক কী আলোচনা থাকতে পারে, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আমাদের মাঝে সুস্পষ্ট ভাষায় তথ্যাদি ব্যক্ত করেছেন। ‘এবং (নিম্ন) আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীরা বলেন, এর দ্বারা মূলত পৃথিবীর বায়ুম-লকে বোঝানো হয়েছে। বায়ুম-ল বলতে পৃথিবীকে চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাসমিশ্রিত স্তরকে বোঝায়, যা পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে। আর এ বায়ুম-ল কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন স্তর নিয়ে গঠিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের ঊর্ধ্বে নির্মিত করেছি বহু সুদৃঢ় স্তর।’ (সূরা নাবা : ১২)। এ ভিন্ন ভিন্ন স্তর পৃথিবীতে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণীসহ মানবজাতির উপকারার্থে অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছে। নিম্নে বিশেষ তিনটির সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
ট্রাপোস্ফিয়ার : ভূপৃষ্ঠের ০-১২ কিমি. উপরে এ স্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্থিত পানি বাষ্পকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিরূপে ফেরত পাঠায়।
আয়োনোস্ফিয়ার : বেতার তরঙ্গ সম্প্রচারকে অপ্রতিরোধ্য যোগাযোগকারী উপগ্রহের মতো প্রতিফলিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ফেরত পাঠায়। আর এভাবেই দূর-দূরান্তে ওয়ারলেস যোগাযোগ, রেডিও, টেলিভিশন সম্প্রচারকে সম্ভব করে তোলে।
ওজোনস্ফিয়ার : এটি ভূপৃষ্ঠের ১২-৫০ কিমি. উচ্চতায় বায়ুম-লে অবস্থিত। যেটি অক্সিজেনের এক গ্যাসীয় রূপের বলয়ে গঠিত। এর কাজ হচ্ছে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর অংশ আর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি উভয়কে প্রতিহত করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে না দেওয়া। এবং পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। এটি গাঢ় নীল বর্ণের একটি গ্যাসীয় স্তর। পৃথিবী টিকিয়ে রাখতে হলে এ ওজোনস্তরের গুরুত্ব যে কতটা বেশি, তা নিম্ন পরিসংখ্যান থেকেই জানা যাবে।
এ ওজোনস্তর যদি কোনোক্রমে ফাটল ধরে, তাহলে ওই ফাটল দিয়ে ভূপৃষ্ঠে অতি বেগুনী রশ্মি পৃথিবীর বুকে আসতে থাকবে। এতে যে ক্ষতি হবে তার পরিসংখ্যান হলোÑ বায়ু দূষিত হয়ে মানবস্বাস্থ্য, প্রাণী ও উদ্ভিত জগৎ, অণুজীব ও জড়বস্তুর ধ্বংসাত্মক পরিণতি ঘটবে। চোখের ছানি, ত্বকের ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি বেড়ে যাবে। এ রশ্মি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মাত্রাতিরিক্ত হারে কমিয়ে দেবে। মৎস্য প্রজাতির বৃদ্ধি ব্যাহত হবে এবং সালোক সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়ে উদ্ভিদ জগতের বৃদ্ধি ও উৎপাদন হ্রাস পেলে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ফলে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে জলীয়বাষ্প ও আবহাওয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, যার ফল হচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। এ বন্যার কারণে সাগরের লোনা পানি পৃথিবীর বেশিরভাগ আবাদ ভূমি ও বসবাসের স্থানকে বাসযোগ্যহীন করে দেবে। ওজোনস্তরের আরও যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে পৃথিবী টিকিয়ে রাখার জন্য, সে তথ্যও বিস্ময়কর। আমাদের এ ভূপৃষ্ঠে রাতের বেলায় সূর্যের আলো ও উত্তাপ না থাকার ফলে রাতের অংশের ভূপৃষ্ঠ বরফে ঢেকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে বরং রাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বহাল থাকে কীভাবে? উত্তর হচ্ছে, দিনের বেলায় সূর্য আমাদের যে তাপ বিকিরণ করে তা থেকে ২০ শতাংশ তাপ স্থানীয় ওজোনস্তর নিজের কাছে জমা রাখে। দিনের সূর্য যখন নিভে যায় তখন না থাকে আলো না থাকে উত্তাপ; কিন্তু ওজোনস্তর সেই ভয়াবহ দুরবস্থা যাতে না হয় সেজন্য নিজ দায়িত্বে ওই উত্তাপটুকু রাতের অন্ধকারে নিজে সূর্য হিসেবে কাজ করে উত্তাপ দিয়ে থাকে, যে কারণে আমরা রাতের বেলায় বরফে ঢাকা পড়ি না বরং নিশ্চিন্তে ঘুমের ঘোরে হারিয়ে যাই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মহান আল্লাহ কত সুনিপুণ স্রষ্টা।’ (সূরা মু’মিনুন : ১৪)।