আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

নামাজের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যাবলি

আবদুল্লাহ আল মাসউদ
| প্রকৃতি ও পরিবেশ

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানব এবং জিন জাতিকে পাঠিয়েছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। তারই গুণকীর্তন করার জন্য। তার পরিচয় লাভের জন্য। পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আমি মানব ও জিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা যারিয়াত : ৫৬)।
কিন্তু আমরা কী ইবাদত করব? কীভাবে করব? এগুলোও তো জানা দরকার। ফলে ইবাদতের ধরন, বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি আল্লাহ তায়ালা বড়ই সুন্দরভাবে রাসুলের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন। কিছু ইবাদত ফরজ করেছেন। কিছু করেছেন সুন্নত। কিছু মুস্তাহাব। 
আমাদের ওপর যত ধরনের ইবাদত আল্লাহ তায়ালা আবশ্যক করেছেন, তন্মধ্যে নামাজ হলো অন্যতম। রাসুল (সা.) বলেন, সবকিছুর মূল হলো ইসলাম, আর ইসলামের খুঁটি হলো সালাত, আর ইসলামের শীর্ষপীঠ হলো জিহাদ। (তিরমিজি : ৩৫৪১)। এখানে ইসলামের মূল খুঁটিই বলা হয়েছে নামাজকে। নামাজের কত গুরুত্ব তা অনুধাবন করা যায় তার বৈশিষ্ট্যাবলির দিকে তাকালে।
এ নামাজের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো অন্য কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। আমাদের ওপর যত ধরনের ইবাদত আরোপিত করা হয়েছে সব ইবাদত আল্লাহ তায়ালা জিবরাইলের মাধ্যমে রাসুলের (সা.) কাছে পাঠিয়েছেন। রাসুল (সা.) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি রাসুলের অন্তরে এলহাম করা হয়েছে। রাসুল (সা.) সে ইবাদত বান্দাকে শিখিয়ে দিয়েছেন। মোট কথা, সব এবাদতই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে রাসুলের কাছে পাঠিছেন। কিন্তু একমাত্র নামাজই এমন ব্যতিক্রম ইবাদত, যে ইবাদত পৃথিবীতে পাঠানো হয়নি। বরং স্বয়ং রাসুল (সা.) কে ওপরে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরশে আজিমে দাওয়াত করে ডেকে নেওয়া হয়েছে এবং সেখানেই আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং এ নামাজ রাসুলের হাতে অর্পণ করেছেন। সুবহানআল্লাহ! নামাজ কত মহত্ত্বপূর্ণ ইবাদত তা এই একটি বিষয় লক্ষ্য করলেই বুঝে আসে যে, আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর এ নামাজ ফরজ করেছেন যেন-তেন জায়গায় নয়। বরং সাত আসমানের ওপরে আরশে আজিমে।
শুধু কী এতটুকুই? যত ধরনের ইবাদত বান্দার ওপর আল্লাহ তায়ালা আবশ্যক করেছেন সব ধরনের ইবাদত অক্ষমতার অবস্থায় স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু এই নামাজই এমন এক ইবাদত যা সুস্থ হোক অসুস্থ হোক, সক্ষম হোক কিংবা অক্ষম সর্বাবস্থায় তা আদায় করা ফরজ। আবশ্যক। এমনকি মুমূর্ষু অবস্থায়ও নামাজ আদায় না করে থাকার কোনা সুযোগ নেই।
এ জন্যই মাসআলা হলো, কেউ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ে অক্ষম হলে বসে আদায় করবে। বসে আদায়ে অক্ষম হলে শুয়ে আদায় করবে। শুয়ে আদায়েও যদি কষ্ট হয় তাহলে মাথা নেড়ে নেড়ে ইশারায় আদায় করবে। তবুও নামাজ  আদায় করতেই হবে। একমাত্র মৃত্যু ছাড়া কোনো অবস্থাতেই নামাজ মাফ হয় না।
অন্যদিকে নামাজ  পরিত্যাগকারীর ওপরই এসেছে সবচেয়ে বড় ধমকি। কুফরের ধমকি, যা অন্য কোনো এবাদতের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।  যেমন, রাসুল (সা.) এর বাণী, তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি ও কুফর-শিরকের মাঝে ব্যবধান হলো সালাত ত্যাগ করা। (মুসলিম : ১১৬)।
তিনি আরও বলেন :  আমাদের মাঝে আর অমুসলিমদের মাঝে চুক্তি হলো সালাত। যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল। (আহমদ : ২১৮৫৯)। 
এই অল্প কিছু ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্যাবলির দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি নামাজের কত গুরুত্ব! কত মহত্ত্ব! ইসলামে নামাজের স্থান কত উঁচুতে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নামাজের গুরুত্ব বুঝে তার ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)।