আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

জন্মগত শিশুর হৃদরোগ

জন্মগত শিশু হৃদরোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে গর্ভাবস্থায় ও গর্ভ পরিকল্পনাকালীন বিভিন্ন ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্য, রেডিয়েশন, মায়ের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতি রোগ, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা সংক্রমণ ইত্যাদির সঙ্গে শিশুর হৃদরোগের যোগসূত্র পাওয়া যায়

ডা. মো. মফিজুর রহমান রাজীব
| সুস্থ থাকুন

জন্মগত হৃদরোগ এমনই একটি রোগ, যার শুরু মায়ের গর্ভে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১ হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে ৮ শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। 

জন্মগত হৃদরোগ কাকে বলে 

মায়ের গর্ভে থাকাকালীন শিশুর হৃদযন্ত্র তৈরি ও বিকশিত হওয়ার প্রাক্কালেই যদি কোনো ধরনের ত্রুটি হয় এবং শিশু সেই হৃদযন্ত্র নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, তবে তাকে জন্মগত হৃদরোগ বলে। অনেক সময় একে শিশুর হার্টে ছিদ্র আছে এমন শব্দও ব্যবহার করা হয়।

কারণ : জন্মগত শিশু হৃদরোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে গর্ভাবস্থায় ও গর্ভ পরিকল্পনাকালীন বিভিন্ন ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্য, রেডিয়েশন, মায়ের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ প্রভৃতি রোগ, গর্ভাবস্থায় মায়ের রুবেলা সংক্রমণ ইত্যাদির সঙ্গে শিশু হৃদরোগের যোগসূত্র পাওয়া যায়। এছাড়াও জেনেটিক কিছু রোগ যেমন ডাউন সিনড্রোম (Down Syndrome), টারনার সিনড্রোম (Turner Syndrome) নিয়ে জন্মানো শিশুরা হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ : জন্মের পর থেকেই ঘন ঘন ঠান্ডাকাশি ও শ্বাসকষ্ট, মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে অসুবিধা ও অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া, হাত ও পায়ের আঙুল ও ঠোঁটে নীলাভ ভাব, ওজন ও শারীরিক বৃদ্ধির অপ্রতুলতা ইত্যাদি।

শিশুর প্রতি মায়েদের লক্ষণীয়

বিষয় :

১. শিশুটির জন্মের পরপরই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা।

২. ভীষণ রকমের কালচে বা নীলাভ ভাব তার ঠোঁটে বা চামড়ায় দেখা যাচ্ছে কিনা। 

৩. শিশুটির হার্টবিট যদি অস্বাভাবিক রকমের কম বা বেশি হয় অথবা ছন্দবদ্ধ না হয়ে অস্বাভাবিকভাবে চলে।

৪. বাচ্চাটি জন্মগ্রহণ করার পর মায়ের দুধ পান করার সময় হাঁপিয়ে যায় কিনা।

৫. অল্প অল্প দুধ পান করে ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দিয়ে আবার কিছু সময় পর দুধ পান করছে কিনা।

৬. দুধ পান করার সময় শিশুটি অস্বাভাবিক রকমের ঘামছে অথবা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

৭. শিশুটি অন্য বাচ্চাদের মতো ওজনে বাড়ছে না।

৮. জন্মের পর থেকেই শিশুর বার বার ঠান্ডা-কাশি লেগেই আছে কিনা এবং সে কারণে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে বা ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে।

৯. শিশুটি কান্নার সময় অস্বাভাবিক রকমের কালো হয়ে যায় এবং একই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয়। একটু বড় বাচ্চারা খেলার সময় একটু দৌড়াদৌড়ি করলেই কালো হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয় এবং উপুড় করে শুইয়ে দিলে বা বড় বাচ্চারা হাঁটু গেড়ে বসলে তাদের স্বস্তি আসে। বড় বাচ্চাদের কখনও কখনও বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদিও হতে পারে।

ওপরের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই শিশুকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

রোগ নির্ণয় : একটিমাত্র পরীক্ষা যদি করা হয় রোগ শনাক্তের জন্য তাহলে সেটা হলো কালার ডপলার ইকোকারডিওগ্রাফি (Color Doppler Echocardiography)। এখন মোটামুটি সব হাসপাতাল বা হৃদরোগ সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ইকোকারডিওগ্রাফি পরীক্ষা হয়। এছাড়াও চেস্ট এক্সরে, ইসিজি, হলটার মনিটরিং, ক্যাথ স্টাডি, কার্ডিয়াক সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি করাতে হবে। 

 

ডা. মো. মফিজুর রহমান রাজীব

ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ