আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

যৌথ পাইপলাইন নির্মাণসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
| অর্থ-বাণিজ্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন- আলোকিত বাংলাদেশ

দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও সহজ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথভাবে পাইপলাইন নির্মাণ করবে সরকার। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আনা সম্ভব হবে। পাইপলাইন নির্মাণে অধিগ্রহণসহ অন্য সুবিধাগুলো নিশ্চিতে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন পায়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন। তিনি জানান, ৯টি প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি নতুন এবং চারটি সংশোধিত। নতুন পাঁচ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৬৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চার সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৬৫৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এর মধ্যে ভারত থেকে জ্বলানি তেল আনতে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আনার সক্ষমতার এ পাইপলাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়িত হবে।
জানা গেছে, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৭৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। দেশে প্রতিনিয়তই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বার্ষিক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল প্রয়োজন হবে। এখানে জ্বালানি তেল সরবরাহসহ উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। তাছাড়া সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেলের চাহিদা আরও বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌপথ ও রেলপথে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। নৌপথে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ও কুড়িগ্রামের চিলমারী, রেলপথে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো, রংপুর ডিপো, নাটোর, রাজশাহী জেলার পবার হরিয়ানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। ফলে সিস্টেম লস বাড়ে। আর সিস্টেম লস কমাতেই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিপিসি। প্রকল্পের আওতায় আসামের নুমালীগড় শোধনাগার থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করবে সরকার। শিলিগুড়ির মার্কেটিং টার্মিনাল (এসএমটি) থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন নির্মিত হবে। এর মধ্যে ভারতের অংশ ৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের অংশ ১২৫ কিলোমিটার।
পাইপলাইন নির্মাণের উদ্দেশে বাংলাদেশের অংশে পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ১৩৪ দশমিক ১২ একর হুকুমদখল এবং তেল সংরক্ষণের জন্য পার্বতীপুরে ছয়টি ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া সৈয়দপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) ট্যাপ অব পয়েন্ট করা হবে। চিরিরবন্দর থেকে সৈয়দপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার ৮ ইঞ্চি ব্যাসের মাটির নিচ দিয়ে পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণ করবে বিপিসি। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখলের জন্য তিনটি জেলার জেলা প্রশাসককে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বিপিসি।
তাই বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে তেল পাইপলাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ শুধুমাত্র ভূমি অধিগ্রহণ কাজ করবে। বাকি পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করবে ভারত। ভারতীয় অনুদানে নির্মিত হবে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন।
সভায় অনুমোদিত অপর চার নতুন প্রকল্পের মধ্যে, ‘বানেশ্বর (রাজশাহী)-সারদা-চারঘাট-ঈশ্বরদী (পাবনা) মহাসড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়কের মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৫৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ‘হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সামনে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা’ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ‘বিসিকের আটটি শিল্পনগরী মেরামত ও পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিডনি রোগের চিকিৎসা তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যেতে ‘মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা ও জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।
সংশোধিত প্রকল্পের মধ্যে সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের খরচ বেড়েছে ২১৭ কোটি টাকা। এতে ২২৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার মূল ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪৩ কোটি ৪ লাখ টাকায়। তেজগাঁওয়ে বিসিকের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৩০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এতে ৬২ কোটি টাকার মূল ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের ব্যয় ২৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৩৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৪৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এতে ১৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার মূল ব্যয় বেড়ে ৩৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।