আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

ব্যবসায়ে প্রভাব নিয়ে ভাবতে হবে

| সম্পাদকীয়

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আতঙ্ক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বিশ্বের বেশ কিছু দেশ এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে নানা ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। বর্তমানে চীনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হওয়ায় আতঙ্কিত বাংলাদেশও। পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ দেশের নানা অবকাঠামোগত প্রকল্পে চীনের নাগরিক এবং তাদের তৈরি যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টের ফেব্রিক্স এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির উল্লেখযোগ্য অংশ চীন থেকে এসে থাকে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যের জোগান হয়ে থাকে চীন থেকে। এ অবস্থায় করোনা ভাইরাসজনিত রোগটি প্রলম্বিত হলে তা নিশ্চিত আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন রয়েছে, তা আমরা অবহিত হয়েছি। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, চীনে করোনা ভাইরাস সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদি হলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প বাজারে নজর রেখেছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বরাতে প্রকাশ, বর্তমানে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়, এতে চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেলেও সমস্যা হবে না। তবে আদা-রসুনসহ অন্য পণ্যগুলোর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীনের বিকল্প বাজারে নজর রাখছে সরকার। তবে মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, এখনও সে সময় আসেনি। এটাও বাস্তবতা যে, চীন নিয়ে যে আতঙ্ক জনমনে সংক্রমিত হয়েছে তা সহসা দূরীভূত হবেÑ সে আশা করা যায় না। 
উল্লেখ্য, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সে দেশেই মৃত্যু হয়েছে ৯ শতাধিক। এছাড়া ফিলিপাইন ও হংকংয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও দুজনের। চীনের বাইরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ আরও ২৭ অঞ্চল বা দেশে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। এক্ষেত্রে চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। এছাড়া এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এ ভাইরাসের প্রভাবে চীনা নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশটি থেকে মালপত্র আমদানি-রপ্তানিতে অনেক দেশ আগ্রহ হারাবে। চীনা নাগরিকদের আগমনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। অথচ চীন আমাদের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রধান আমদানিকারক দেশ। এ অবস্থা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকর। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে বাণিজ্যমন্ত্রী এরই মধ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছেন। 
বিশ্বায়নের আজকের দিনে সম্পর্কিত যে কোনো দেশে দুর্ঘটনা-অঘটন নানা অস্বস্তি তৈরি করে। চীনের করোনা ভাইরাস আতঙ্ক আজ আমাদের তেমনই পরিস্থিতির মুখামুখি করেছে। তবে এ ধরনের পরিস্থিতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় সর্বদা সজাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। এজন্য যত দ্রুতই সম্ভব আমদানিকৃত পণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। এদিকে এ আতঙ্ককে ঘিরে এরই মধ্যে সুবিধাবাদীরা বাজারে রসুনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বাজার তদারকির বিষয়টিও জরুরি। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি এবং আমদানির বিষয়ে টেকসই কৌশল এখনই নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সামনে রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের বাজারে যাতে অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আশা করা যায়, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের তৎপরতায় সম্ভাব্য সমস্যা সমাধানে আমরা সফল হব।