আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

দিল্লিতে আম আদমি পার্টির নিরঙ্কুশ জয়

কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানালেন মমতা

আলোকিত ডেস্ক
| প্রথম পাতা

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আম আদমি পার্টি (আপ)। এতে টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতা মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মঙ্গলবার ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনের মধ্যে তার দল আপ পেয়েছে ৬২টি আসন। বাকি আটটি আসন পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। কোনো আসন পায়নি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। আপের এ নিরঙ্কুশ বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিন বুথফেরত জরিপে কেজরিওয়ালের দল আপের জয়ের বিষয়ে আভাস পাওয়া গিয়েছিল। ভোটের তিন দিন পর মঙ্গলবার সকাল ৮টায় গণনা শুরুর পরপর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি এগিয়ে থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলকে অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় আপ। বলা নিষ্প্রয়োজন, এ নির্বাচনের দিকে পুরো ভারতেরই দৃষ্টি ছিল। কারণ, ভারতে এরই মধ্যে কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপ, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে। নির্বাচনে জয় পেতে বিজেপিও চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি। দলটির অনেক শীর্ষ নেতা নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা আর হলো না; আরেকটি মেয়াদের জন্য দিল্লির ক্ষমতায় গেলেন আপের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
নির্বাচনে জয় নিশ্চিত জেনে দিল্লিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উদযাপনরত আম আদমি পার্টির নেতাকর্মীরা বলেন, বিভাজনের রাজনীতির ফাঁদে পা না দিয়ে সত্যিকারের সুশাসন ও উন্নয়ন নিয়ে কঠোর প্রচারের ফল পেয়েছে দল। দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন, সাশ্রয়ী মহল্লা ক্লিনিক স্থাপন এবং স্বল্প মূল্যে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাহবা পেয়েছেন দুই মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। প্রচারে কেন্দ্রের কাছ থেকে পুলিশ বাহিনী ও ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিতে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে জনমত চেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বিজেপি ভারতের বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে দিল্লির মুসলিমপ্রধান এলাকা শাহিনবাগের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ‘তিক্ত’ প্রচার চালিয়েছে। 
ভোট প্রচারের শেষ দিকটায় শাহিনবাগ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েও নিজেকে দ্রুত সামলে নেন কেজরিওয়াল। বিক্ষোভকারীরা দেশকে টুকরো টুকরো করা ছাড়া আর কিছুই চায় না বলে হাজার হাজার মুসলিম নারীকে ‘বিপজ্জনক বিশ্বাসঘাতক’ চিত্রিত করে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি অভিযোগ করে, আপ তাদের সমর্থন দিচ্ছে। বিজেপির পক্ষে প্রচার চালানো দুজন সংসদ সদস্যকে ‘তারকা প্রচারক’ তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের মন্তব্যের জন্য, যেখানে তারা ‘বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করতে’ সমর্থকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক ভাষ্যকার নীরজা চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিভাজন’ বিজেপির প্রয়োগ করা ও পরীক্ষিত এমন একটি পদ্ধতি, যা অতীতে দলটিতে ভোটে জিতিয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩৬ ভোটারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দিল্লি বিধানসভার ৭০ আসনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৬৭২ প্রার্থী। আম আদমি পার্টি (আপ) সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল। বিজেপি লড়ে ৬৭ আসনে; বাকি তিনটিতে তাদের জোট শরিক জেডিইউ ও এলজেপি প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া ৬৬ আসনে কংগ্রেস ও বাকি চারটি আসনে জোটসঙ্গী আরজেডি প্রার্থী দিয়েছিল। নির্বাচনে দিল্লিতে কোনো আসনই পায়নি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল কংগ্রেস। 
২০১৫ সালের বিধানসভার ভোটে দিল্লির ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টিতে জয়ী হয়েছিল আম আদমি পার্র্টি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে চিত্রটা উল্টে যায়। লোকসভার সাতটি আসনের সাতটিতেই জেতে বিজেপি। ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি, পাঁচটিতে কংগ্রেস, এএপি একটিতেও নয়। এর আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি, সেই ভোটেও বিজেপি দিল্লির সাত আসনেই জয় পায়। কিন্তু পরের বছরই বিধানসভার ভোটে আম আদমি পার্টির কাছে বড় ধরনের হার জুটে তাদের। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে জয়ী হয়ে জোটবেঁধে প্রথম সরকার গঠন করেছিল আম আদমি পার্টি। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী আইন পাসে শরিকদের অসহযোগিতার কারণ দেখিয়ে ৪৯ দিন পর দিল্লির মসনদ ছেড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। কেন্দ্রের শাসনের পর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির বিধান সভার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জয় নিয়ে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। এবারও ক্ষমতায় ফিরছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি সরকার।
কলকাতা প্রতিনিধি জানান, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হ্যাটট্রিক সুনিশ্চিত হতেই তাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃনমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ও (কেজরিওয়াল) আমার খুব ঘনিষ্ঠ। ভালো সম্পর্ক। ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছি। এটা মানুষের রায়। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এ রায়। এটা নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে রায়। মমতা বলেন, এভাবেই বিজেপি শেষ হয়ে যাবে, এটা সবে শুরু। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি দিল্লি যেতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।