নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীন থেকে বাংলাদেশি কাউকে এ মুহূর্তে সরকারিভাবে দেশে ফেরানো হচ্ছে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ব্যক্তিগত খরচে কেউ ফিরলে পরবর্তী ব্যবস্থা সরকার নেবে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন হচ্ছেÑ আমরা প্লেন পাঠিয়ে ওদের আনব কি না, জনগণের টাকা খরচ করে ওদের আনব কি না। আমরা খুব সংবেদনশীল, তাদের বাবা-মা অনেকে বলছেন তাদের নিয়ে আসার জন্য। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা যদি নিয়ে আসেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা আসলে আসতে পারে। আগে আমরা যাদের এনেছি, ৩ কোটি টাকা আমাদের প্লেন ভাড়া দিতে হয়েছে, আমার ফান্ডে আর কোনো পয়সা নেই। এখন তারা চাইলে আসতে পারে।
করোনা ভাইরাস চীনের যে নগরী থেকে ছড়িয়েছিল, ওই উহান থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ৩১২ বাংলাদেশিকে বিমানের একটি উড়োজাহাজ গিয়ে দেশে ফেরত আনে। তারপর ওই পাইলটদের অন্য দেশ ঢুকতে দিতে না চাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিমান। এ পরিস্থিতিতে অন্য কোনো পাইলটকে আর চীনে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে পারছেন না বাংলাদেশ। চীনা কোনো বিমান পরিবহন সংস্থার উড়োজাহাজ ভাড়া করে উহানে আটকে থাকা আরও ১৭১ বাংলাদেশিকে আনার কথা বলা হলেও তাতে চীনা কর্তৃপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। উহানের পাশের শহর ইচাংয়েও আটকে আছেন ১৭২ জন, তারাও দেশে ফিরতে আগ্রহী। উহান থেকে প্রথম দফায় ফেরা বাংলাদেশিদের কারও মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা না গেলেও সতর্কতার অংশ হিসেবে তাদের ১৪ দিন আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদের বেশিরভাগ রয়েছেন আশকোনার হজ ক্যাম্পে, বাকিরা হাসপাতালে। যেসব বাবা-মা যোগাযোগ করেছেন, তাদের সন্তান নিজ উদ্যোগে দেশে ফেরানোর কথা বলা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি আপনারা যদি আনতে চান, দেখেন আমরা এখনও ফ্লাইট বাতিল করিনি। বিশেষ করে কুনিমং এবং গুয়াংজু থেকে চায়নিজ ফ্লাইট আসছে। চীনে আটকে থাকা বাকিদের ফেরানোর ক্ষেত্রে টাকাই একমাত্র সংকট কি নাÑ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নট নেসেসারিলি। এরা যদি হজ ক্যাম্প থেকে বের না হয়, বাকিদের কোথায় রাখব? আমরা বলেছি, তোমরা যদি আসতে চাও, ডেফিনিটলি আমরা চেক করে, কোয়ারেন্টিনে পৌঁছে দেব। কোয়ারেন্টিনে রাখার ক্ষেত্রেও জটিলতা হচ্ছে জানিয়ে মোমেন বলেন, আমাদের দেশ খুব ঘনবসতিপূর্ণ, আমাদের কোয়ারেন্টিনেও কিছু সমস্যা হয়। কারণ মা, বাবা, আত্মীয়স্বজন, আশপাশের লোক দেখা করতে চলে যায়। কোয়ারেন্টিনের লোক কেউ নামাজ পড়তে গেলেতো আমরা তাকে আটকাতে পারি না। নামাজে গেলে স্পর্শ থেকেও সেটা ছড়াতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুব কম দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুরÑ এ রকম কয়েকটি দেশ তাদের লোকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। বাকি শত শত দেশের লোক তাদের ওখানে আছে। চায়নিজরা ওদের সাবধান করে দিয়েছে এবং দে আর টেকিং কেয়ার অব ইট। আমাদের ছেলেমেয়ে যারা আছে, তারা অভিযোগ করেছেÑ তাদের নাকি খাবার দেওয়া হয় না। কিন্তু আমরা তথ্য নেওয়ার পর দেখেছি, চায়নিজরা বলেছে তাদের পানি দেয়, খাবার দেয়, যথাসময়ে পৌঁছে দেয়। দুজন চায়নিজ সিনিয়র অফিসিয়াল নিয়োগ করেছে তাদের দেখভাল করার জন্য। ওখানে তারা মোটামুটি ভালো আছে।
প্রসঙ্গত, নভেল করোনা ভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। এতে আপাতত নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হলো যারা এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেনÑ তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কিছু স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ার পর মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।