আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১২-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

খুলনার চাঞ্চল্যকর চার হত্যা মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব

সাক্ষীরা গড়হাজির

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা
| শেষ পাতা

সাক্ষী হাজির না হওয়ায় বিচারে অগ্রগতি হচ্ছে না খুলনার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর চারটি হত্যা মামলার। ফলে মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। 
এদিকে ১২ জানুয়ারি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খুলনার সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা মনিটরিং কমিটিতে তালিকাভুক্ত চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলাগুলো হচ্ছেÑ দিঘলিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান হালিম গাজী, লবণচরার শামসুর রহমান চাঁদনী, কাজী তাসফিন হোসেন তয়ন ও হাবিবুর রহমান। 
জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর এনামুল হক জানান, রাষ্ট্রপক্ষের মামলাগুলো সঠিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। জেলা ও মহানগরের চাঞ্চল্যকর এবং লোমহর্ষক মামলাগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মামলার সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।
আইনজীবীরা বলেন, সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি তারা আদালতের নির্ধারিত তারিখে ঠিকমতো উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন, তাহলে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয় না।
দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী ফকির মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, তয়ন হত্যাকা-ে চার্জশিটভুক্ত সাত আসামি রয়েছেন। এর মধ্যে আসামি কাজী মুরাদ হোসেন জেলহাজতে এবং মো. জাকির হোসেন শুরু থেকেই পলাতক। বাকি আসামিরা জামিনে আছেন। এ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি।
জেলা মনিটরিং কমিটির সূত্র জানায়, কাজী তাসফিন হোসেন তয়ন ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় তার বাবা কাজী ফেরদৌস হোসেন তোতা ৮ সেপ্টেম্বর খালিশপুর থানায় মামলা করেন। এরপর খালিশপুর থানা পুলিশ মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে সন্দেহজনক আসামি সাইফুল ইসলাম গাজীকে আটক করে। এরপর সাইফুল স্বীকার করেন, তিনি অন্য সহযোগীসহ ২৮ আগস্ট রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে তয়নকে হত্যা করে লাশ বয়রা পুলিশ লাইনের পশ্চিম পাশের মোস্তফা কামালের ডোবা জমির উত্তর পাশের কচুরিপনা ও হোগলা বনের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখেন। ওই ডোবা থেকে পিলার ও বাঁশের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় তয়নের আংশিক গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিরা হলেনÑ সাইফুল ইসলাম গাজী, কাজী মুরাদ হোসেন, কাজী ফরহাদ হোসেন, কাজী সাব্বির হোসেন ফাহিম, কাজী রওনাকুল ইসলাম রনো, কাজী মো. মাসুম, মো. জাকির হোসেন। খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-৩ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ জানান, লবণচরায় স্কুলছাত্রী চাঁদনী আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলাটির চার আসামিই জামিনে রয়েছেন। এ মামলা এখনও সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর লবণচরা থানাধীন উত্তরপাড়া আদর্শলেন ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসা এলাকায় রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ছাদের লোহার হুক ও সিলিং ফ্যানের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্রী চাঁদনী। এ ঘটনায় তার বাবা (অব.) সেনা সার্জেন্ট রবিউল ইসলাম তাকে স্কুলে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তকারী শুভসহ চারজনের বিরুদ্ধে লবণচরা থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ৩০ নভেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় মোট ২৩ বার তারিখ পড়ে। কিন্তু একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এদিকে সদর থানার জিআরও এসআই মোবারেক হোসেন জানান, হাবিব হত্যা মামলায় পিবিআই ইন্সপেক্টর শেখ আবু বকর সিদ্দিক পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেনÑ সরদার আসাদুজ্জামান ওরফে আরিফ, অনুপম, খলিলুর রহমান, গাজী আবদুল হালিম ও একেএম মোস্তফা চৌধুরী মামুন। এর মধ্যে মূল আসামি মোস্তফা মামুন শুরু থেকেই পলাতক থাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি কপি প্রাপ্তির জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য বদলি করা হবে।
২০১৯ সালের ৭ মার্চ নগরীর শেরেবাংলা রোড থেকে পলিথিনে মোড়ানো হাবিবুর রহমানের (২৬) লাশের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ফারাজীপাড়া রোডে ড্রেনের পাশ থেকে দুটি ব্যাগে থাকা মাথা ও দুই হাতসহ কয়েক খ- অংশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা ৯ মার্চ খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাতনামা করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২১ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর শেখ আবু বকর সিদ্দিক পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
খুলনার পিপি এনামুল হক বলেন, দিঘলিয়ার চেয়ারম্যান হালিম গাজী হত্যা মামলা সিআইডির পর পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইয়ের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন আদালত। পুলিশ রিপোর্ট পেলেই মামলাটি দ্রুত বিচারের জন্য এগোবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
পিবিআই ইন্সপেক্টর শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানান, চেয়ারম্যান হালিম হাজী হত্যা মামলাটির তদন্তভার সিআইডি ইন্সপেক্টর শাহজাহানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তখন বাদী নারাজি দেয়। পুনরায় মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিতে পাঠালে এএসপি বাগরেহাট জেলা মতিয়ার রহমানের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এরপর তিনি ৩০ জনের নামে চার্জশিট প্রদান করেন। সিআইডি রিপোর্ট প্রদানের পর দীর্ঘ শুনানি অন্তে সাবেক পিপি কাজী আবু শাহিন মামলাটি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পিবিআই খুলনায় পাঠান। এরপর পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ প্রদান করলে আমার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এ হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, যেকোনো সময় পুলিশ রিপোর্ট কোর্টে দাখিল করা হবে। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর বিকাল ৩টায় চেয়ারম্যান হালিম দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের মিটিং শেষ করে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা তাকে গোয়ালপাড়া নামক স্থানে গুলি করে চলে যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এরপর তাকে যশোর সিএমএইচে ভর্তি করা হয়, পরদিন হেলিকপ্টারযোগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ নভেম্বর রাত ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ফারহানা হালিম অজ্ঞাতনামা করে দিঘলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।