পুঁজিবাজারের পতন রুখে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ও তারল্য সংকট কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য তালিকাভুক্ত ব্যাংকসহ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে সক্রিয় করতে গঠন করেছে বিশেষ তহবিল। আলোকিত বাংলাদেশে প্রকাশ, প্রতিটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে এই তহবিল বিনিয়োগ করতে পারবে। নিজস্ব তহবিল কিংবা ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তহবিল নিতে পারবে সব তফসিলি ব্যাংক। সে হিসাবে ৫৭টি তফসিলি ব্যাংক প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। ব্যাংকগুলো নিজেরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে পারবে। এমন ঘোষণার পরই সুবাতাস বইছে পুঁজিবাজারে। নিষ্ক্রিয় থাকা বিনিয়োগকারীরা আড়মোড়া ভেঙে শেয়ার কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক ও লেনদেন বেড়েছে। নিঃসন্দেহে এমন পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ।
সোমবারের পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদিন ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৭১ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়া সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩০ পয়েন্টে এবং ডিএস ৩০ সূচক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫০৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা গেল কার্যদিবস থেকে ১৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বেশি। রোববার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া মোট ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৯৬টির, কমেছে ৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৫১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬৩২ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অঙ্কে ৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, বিগত মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক বেড়েছে।
উল্লেখ্য, অস্থিরতার মধ্যে দীর্ঘদিন পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। লেনদেনের গতি বৃদ্ধি আর সূচকের উত্থানে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হওয়ার আগেই তা ভেঙে যাচ্ছিল। ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বাড়ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নীতিনির্ধারকসহ সব মহলের আন্তরিকতার ফলে ধীরে ধীরে বাজারে স্থিতিশীলতার আভাস নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। তবে আশঙ্কার কথা, এখনও অনেক কোম্পানির শেয়ারের দর আগের মতোই নিম্নমুখী। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুঁজিবাজার চাঙ্গাকারী নির্দেশনার পর কয়েক দিন শেয়ারের দাম বাড়ার পর আবার পতন শুরু হলে এতে দীর্ঘসময় ধরে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে রেখেছেন, তাদের কোনো উপকার হবে না। তাই শেয়ারের দাম বাড়লে মূল্য সংশোধন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মূল্য সংশোধনের নামে সূচকের পতন যেন দীর্ঘসময় ধরে অব্যাহত না থাকে, সেদিকেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর দেওয়া উচিত। লক্ষণীয় বিষয়, বিগত সময়ে দেখা গেছে পুঁজিবাজার যখনই চাঙ্গা হয় তখন কিছু অসাধু মহল অনৈতিক কর্মকা- দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে পুঁজিবাজারে ধস নামায়। সংগত কারণেই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিগত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে কেউ অনৈতিক সুবিধা ভোগের মাধ্যমে আবারও শেয়ার বাজারে ধস নামাতে না পারে। দেশের অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে বহমান সুবাতাস অব্যাহত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা।