পর্যটন-শ্রমশক্তিসহ দুই দেশের স্বার্থ রক্ষায় ৬০ বিষয়ে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ-সৌদি আরব। এর মধ্যে ৩১ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি সই করেছে দুই দেশ। দুই দিনের যৌথ কমিশনের বৈঠকের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি সই হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন দলনেতা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ। আর সৌদির পক্ষে স্বাক্ষর করেন দেশটির প্রতিনিধি দলের নেতা শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মাহির আবদুল রহমান গাসিম। পরবর্তীকালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চুক্তির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এছাড়া বাকি ২৯ বিষয়ের ওপরে আরও যাচাই-বাছাই করে চুক্তির কাজ করা হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চুক্তি শেষে মনোয়ার আহমেদ বলেন, দুই দেশের মধ্যে ৬০টি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে উভয় দেশই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। বুধবার সৌদির অ্যাকোয়া পাওয়ারের সঙ্গে ১৮০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চুক্তি হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই সৌদি আরবের বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসবেন এবং এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরের পর দুই দেশের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় গেছে বলেও জানান তিনি। দুই দেশে আলোচনায় স্থান পায়, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান, দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত ইত্যাদি।
এক প্রশ্নের জবাবে ইআরডি সচিব বলেন, আমরা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। তবে এর সঙ্গে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও সংস্থা যুক্ত। তাই পরবর্তীকালে আলাপ-আলোচনা করা হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যৌথ কমিশন বৈঠক দুই বছর পর পর হয়। কিন্তু টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক চলে সবসময়ই। তাই বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তী কালে বাস্তবায়ন হয় টেকনিক্যাল কমিটির মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহির আবদুল রহমান গাসিম বলেন, রেহিঙ্গা ইস্যু একটা স্পর্শকাতর বিষয়। এরই মধ্যে সৌদি আরবে কিছু রোহিঙ্গা আটক রয়েছে। অনেকে জেলও খাটছে। তাদের সাজা শেষে ফেরত পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পরে দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই পারস্পরিক চুক্তির ভিত্তিতে একটি যৌথ কমিশন (জেসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে যৌথ কমিশনের বাংলাদেশ ও সৌদি আরবে বিকল্পভাবে ১২টি অধিবেশন হয়েছে। সর্বশেষ (১২তম) যৌথ কমিশন অধিবেশন রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়। এবার বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ১৩তম যৌথ কমিশন অধিবেশন আয়োজন করেছে। দুই দিনের যৌথ কমিশন বৈঠকে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা এজেন্সিগুলোর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। মৈত্রী এবং পারস্পরিক দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মূল বিষয় ধরে রেখে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় প্রতিনিধি দল দুই দেশের সর্বশেষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির তথ্য আদান-প্রদান করে। যৌথ কমিশনের এবারের সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বে রয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ। সৌদি আরবের ৪০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন সৌদি আরবের শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী মাহির আবদুল রহমান গাসিম। জেসি সভায় জনশক্তি, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ধর্মীয় বিষয়, পর্যটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি ও ফিশারি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা ১৩তম যৌথ কমিশন অধিবেশনে এজেন্ডা এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার এলাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব খাতে দেশটি থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার সৌদি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।