করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চীনের উহান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা ৩১২ বাংলাদেশি দুই সপ্তাহের পর্যবেক্ষণ শেষে শনিবার বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. জাহিদ মালেক। ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, চীন থেকে ফেরা বাংলাদেশিরা ‘কোয়ারেন্টাইনের শেষ পর্যায়ে’ আছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যবেক্ষণের ১৪ দিন পূর্ণ হবে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৫ তারিখ তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এখানে আর কোনো সমস্যা নেই। তাদের সবাই ভালো আছেন।
২০১৯ সালের শেষ দিন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। চীন থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়াতে থাকায় এ ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ বিমানে করে দেশে ফেরে ৩১২ জন বাংলাদেশির প্রথম দলটি। আটজনের শরীরে জ্বর থাকায় তাদের ঢাকার দুটি হাসপাতালে রেখে বাকিদের আশকোনা হজক্যাম্পে ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে পাঠানো হয়। কারও মধ্যেই করোনা ভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি বলে জানিয়ে আসছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটÑ আইইডিসিআর। প্রথম দফায় ৩১২ বাংলাদেশিকে ফেরানো হলেও হুবেইয়ের বিভিন্ন শহরে আটকাপড়া অন্য বাংলাদেশিরা এখনও দিন কাটাচ্ছেন অবরুদ্ধ অবস্থায়। কেবল উহানেই এখনও আটকে আছেন অন্তত ১৭১ জন। উহানের পাশের শহর ইচাংয়েও ১৭২ জন আটকে আছেন, তারাও দেশে ফিরতে আগ্রহী।
করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণ হওয়ার আগে এ ধরনের কথা ছড়ানো ঠিক নয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। রংপুরে একজন ভর্তি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নানা অসুখ-বিসুখ নিয়ে লোকজন ভর্তি হয়। কখনোই মনে করা উচিত না তারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এ ধরনের কথা বললে আতঙ্ক ছড়ায়।
সংক্রমণের সংখ্যা এবং প্রাণহানি বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে উহানসহ হুবেই প্রদেশের একটি বড় অংশে চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন সরকার। ফলে উহানের ১ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও গবেষণায় থাকা কয়েকশ’ বাংলাদেশিও কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে পড়েন।
এ করোনা ভাইরাসকে এতদিন নভেল বা নতুন করোনা ভাইরাস বা সংক্ষেপে ২০১৯-এনসিওভি বলা হচ্ছিল। এ ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করছে তার নতুন নাম দেওয়া হয়েছে কভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস ডিজিজ)। নতুন এ করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ জন ছাড়িয়ে গেছে, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬০ হাজার। মৃত্যু ও সংক্রমণের অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে চীনের উহান প্রদেশে।