আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৪-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

কালীগঞ্জের ফুলের সৌরভ দেশজুড়ে

মতিয়ার রহমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
| প্রথম পাতা

আজ ১ ফাল্গুন। বসন্তকে জড়িয়ে ধরেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। আজকের দিনে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ তার প্রিয়জনকে ফুল দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করবেন। ফুলেল পরিবেশে হবে বসন্তবরণের নানা অনুষ্ঠান। যে কারণে দিনটি ফুল ছাড়া একেবারে চলেই না। এক দিনে দুটি ফুলনির্ভর উৎসব হওয়ায় কয়েকদিন আগেই ফুলে ফুলে ভরে গেছে দেশের সব ফুলের পাইকারি বাজার। যেখানে রয়েছে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাঁদাফুল উৎপাদনকারী অঞ্চলখ্যাত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ফুল চাষিদের উৎপাদিত ফুলও। আজকের দিনে একসঙ্গে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ। তাই ফুল বিক্রির ক্ষেত্রে খানিকটা বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে মানুষ আজ ভালোবাসা দিয়েই বরণ করছে ঋতুরাজ বসন্তকে। আবার কয়েকদিন পরই জাতীয়ভাবে পালিত হবে আরেক অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেদিনও সারা দেশে থাকবে ফুলের ছড়াছড়ি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই পালিত হয় ফুলনির্ভর তিনটি বড় উৎসব। ফলে এ মাসের বাজার ধরতে ফুল চাষিদের ব্যস্ততা থাকে বহুগুণ বেশি। 
ফুল চাষিরা জানান, আজকের বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে সারা দেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে ফুল চাষিরা বেশ কয়েকদিন কাটিয়েছেন মহাব্যস্ততার মধ্যে। এ অঞ্চলের কৃষক কয়েকদিন আগেই তাদের উৎপাদিত ফুল বড় বড় গাড়ি ভরে ফুল পাঠিয়েছেন ঢাকার শাহবাগ, আগারগাঁও, চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় বাজার, ফেনী, দিনাজপুর, রংপুর, কুমিল্লা, নওগাঁসহ দেশের বড় বড় শহরের পাইকারি ফুলের বাজারে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মাটি ফুল উৎপাদনে সহায়ক। বর্তমানে এ এলাকায় দেশি-বিদেশি জাতের ভিন্ন ভিন্ন রঙের লিলিয়াম, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ভুট্টাফুল, গাঁদাসহ বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৯৫ হেক্টোর জমিতে ফুলচাষ করা হয়েছে, যা সারা দেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। লাভজনক তাই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুল চাষ।
বুধবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক বাণিজ্যিভাবে চাষ করেছেন দেশি-বিদেশি জাতের বিভিন্ন রং ও সৌরভের ফুল। ফুল চাষিরা তাদের খেতে উৎপাদিত ফুল বাজারজাত করতে সবাই ব্যস্ত। গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের মেয়েরা ফুলকন্যা হিসেবে মজুরির ভিত্তিতে খেত থেকে ফুল তুলছেন, বাজারজাতকরণে সহজ বহনযোগ্য করতে মালা বা ঝোপা তৈরি করছেন তারা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কালীগঞ্জ শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, উপজেলার শত শত ফুল চাষি ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন পরিবহনবোঝাই ফুল নিয়ে দূরপাল্লার গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। আবার কিছু কিছু দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের ছাদে ফুলের বড় বড় ঢোপ সাজানো হচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত নানা রঙের ফুলে ফুলে ভরে গেছে মেইন বাস টার্মিনাল। 
সারা দেশের আড়তগুলোয় ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুল চাষি জানান, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, বসন্তবরণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসসহ ধর্মীয় বিভিন্ন দিনগুলোয় ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য তাদের উৎপাদিত ফুল বাজারজাতকরণে বাড়তি প্রস্তু০তি নিতে হয়। উপজেলার বড়ঘিঘাটি গ্রামের ফুলকন্যা আয়েশা বেগম জানান, তিনি অসচ্ছল পরিবারের একজন সদস্য। সারা বছর ফুল চাষিদের খেত থেকে ফুল তুলে মালা ও ঝোপা তৈরির কাজ করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন, যা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগান।
উপজেলার সবচেয়ে বড় ফুল চাষি ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুল চাষি টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে বিদেশি জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছিলেন। এ বছরও তার প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে বিদেশি জাতের ভিন্ন ভিন্ন রঙের লিলিয়াম, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ভুট্টাফুলের চাষ করেছেন। এলাকার পুরোনো এ ফুল চাষি আরও জানান, তিনি সারা বছরই ফুল বিক্রি করেন, তবে আজকের বসন্তবরণ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে যে ফুল বাজারে পাঠিয়েছেন কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা আসবে বলে আশা করছেন। আর কয়েকদিন পরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আরও আসবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, সারা দেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুল বর্তমানে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তিন থেকে চার দিন আগে থেকেই ফুল বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে আজ সারা দিন। ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ফুলেই সারা দেশের বাজার দখল করে আছে। বুধবার রাতে প্রতি ঝোপা গাঁদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০, রজনীগন্ধ্যার স্টিক ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০, তবে প্রতি পিস ১০০ গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। প্রায় তিন যুগের ব্যবসার অভিজ্ঞতায় গোলাপের দাম এ বছরই সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী।