আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৪-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

শাহ আরফিন টিলায় পাথর উত্তোলন বন্ধ

সিলেট ব্যুরো
| শেষ পাতা

‘মৃত্যুকূপ’ খ্যাত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরফিন টিলায় সব পন্থায় পাথর উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সূত্র জানায়, গেল তিন বছরে শাহ আরফিন টিলায় পাথর তোলার গর্ত ধসে ২৮ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, কোয়ারির কথিত লিজ গ্রহীতা বশির অ্যান্ড কোংয়ের পক্ষে মোহাম্মদ আলীর দায়ের করা রিটের কারণে এ কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছিল না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য জানান, বশির অ্যান্ড কোংয়ের পক্ষে মোহাম্মদ আলী পর্যায়ক্রমে আদালতে রিটের মাধ্যমে সময় বাড়িয়ে পাথর উত্তোলন করছিলেন। ২১ জানুয়ারি এ আদেশের শুনানিতে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পাথর উত্তোলনের সময় বাড়ানো হয়। এর বিপরীতে গেল সোমবার সরকার পক্ষ উচ্চ আদালতে যান। উচ্চ আদালত মোহাম্মদ আলীর করা রিট আদেশ স্থগিত করে দেন। ফলে কোনো প্রক্রিয়ায় শাহ আরেফিন টিলায় পাথর উত্তোলন করা যাবে না। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গেল মঙ্গল ও বুধবার শাহ আরেফিন টিলায় টাস্কফোর্সের অভিযানে মাইকিং করে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অভিযানকালে কোয়ারি এলাকায় শ্রমিকহীন ৩০ থেকে ৩৫টি ছাউনিঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ইউএনও জানান, ২ ফেব্রুয়ারি কোয়ারিতে শ্রমিক নিহতের পর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহ আরেফিন টিলা শ্রমিকশূন্য রয়েছে। এরপর দিনে বা রাতে পাথর উত্তোলন হয়নি। তবে কোয়ারি এলাকায় করা শ্রমিকদের ছাউনিঘর ও তাঁবু আছে। সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ কোয়ারিতে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। স্থানীয়রা জানান, শাহ আরেফিন টিলায় পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে কিছুদিন আগে ট্রাক্টর চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু প্রভাবশালীরা নতুন সড়ক করে টিলায় পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি খাস খতিয়ানের ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জায়গায় শাহ আরেফিন টিলা। প্রায় ৭০০ বছর আগে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) খাসিয়া পাহাড় এলাকা পরিভ্রমণকালে এখানে বিশ্রাম নিতেন। এরপর থেকে ওই টিলার নাম হয়েছে শাহ আরেফিন টিলা। লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এ টিলার নিচে রয়েছে বড় বড় পাথর। এসব পাথর উত্তোলন করতে চলে টিলা কাটা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ বছরে সিলেটের সাতটি পাথর কোয়ারিতে ৭৬ পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শাহ আরফিন টিলায় সর্বোচ্চ ২৮ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া জাফলংয়ে ২১, ভোলাগঞ্জে ১৩, বিছনাকান্দিতে পাঁচজন, লোভাছড়ায় আটজন এবং উৎমা ছড়া কোয়ারিতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ শ্রমিক।