আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

করোনা ভাইরাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএপিএমইএ

১৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রপ্তানি খাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
| অর্থ-বাণিজ্য

 

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পাঁচ থেকে ছয় মাস যদি চীন থেকে পণ্য না আসে বা বন্ধ থাকে, তাহলে রপ্তানি খাতে প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে একটি হোটেলে বিজিএপিএমইএ আয়োজিত বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প খাতের ওপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. আবদুল কাদের খান।
কাদের খান বলেন, চীন থেকে মোট এক্সেসরিজের ৪০ বা ৫০ শতাংশ আমদানি করা হয়। তবে দেশে যে চাহিদা রয়েছে, এত অল্প সময়ে কাছাকাছি দেশ ভারতসহ অন্য কেউ এ সাপোর্ট দিতে পারবে না। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি যদি চীনের কারখানাগুলো খুলে যায়, তাহলে চাহিদা পূরণে সময় লাগবে না। যদি কোনো কারণে সেটা না হয়, তাহলে রপ্তানির জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। সাধারণত বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করা হয়। তাই ইচ্ছে করলেই অনেক বেশি আনা যায় না।। রপ্তানির ওপর একটি লিমিটেশন আছে। অর্থাৎ সারা বছর আমদানি প্রাপ্যতা কত, সেটা বেইজ করে কারখানাগুলো পণ্য আমদানি করে থাকেÑ যোগ করেন আবদুল কাদের খান।
তিনি আরও বলেন, লোকাল মার্কেট থেকে কিছু কিছু পণ্য কিনতে গিয়ে দেখেছি, কোনো কোনো পণ্যে শতভাগ দাম বেড়ে গেছে। অর্থাৎ, কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু হয়েছে। চীন থেকে যদি পাঁচ থেকে ছয় মাস পণ্য আসা বন্ধ থাকে, তাহলে রপ্তানি খাতে এর প্রভাব পড়বে। কাঁচামাল না পাওয়ায় শ্রমিকের বেতন বন্ধ থাকবে, ব্যাংকের ইন্টারেস্ট বসে বসে দিতে হবে। এজন্য এ সেক্টর বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। অন্যদিকে, চীনে ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক ছুটি থাকে ৭ থেকে ১০ দিন। ওই সময়টা মাথায় রেখে পণ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু সময়টা বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে ৮ থেকে ১০ দিনের গ্যাপ হয়েছে। অনেকের পণ্য পোর্টে এলেও ডকুমেন্টস নেই। আবার ডকুমেন্টস আছে পণ্য নেই। চীনের ব্যাংকগুলো বন্ধ। সবমিলিয়ে সমস্যা কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে।
কাদের খান আরও বলেন, কাঁচামালের দাম বাড়ছে। এক বা দেড় মাস থেকে সমস্যা শুরু হবে। অন্যদিকে, বায়ারদের কাছে বাড়তি মূল্য পাব না। কিন্তু পণ্য বেশি দামে কিনতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে ক্ষতি আমাদের হবেই। আর এরই মধ্যে আমাদের প্রায় ১০০ বা ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েই গেছে। এছাড়া আমাদের প্রায় ১ হাজার ৭৪৪টি প্রতিষ্ঠান আছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে ৩৫টির মতো পণ্য উৎপাদন করে থাকে এবং ৯৫ শতাংশ দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। সব মিলিয়ে সংকট কয়েক মাস স্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সংগঠনটির উপদেষ্টা রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, এ কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন অবস্থা হবে। এখন যদি জিরো শতাংশে ব্যাংক লোনও দেওয়া হয়, তাহলেও সার্ভিস দেওয়া কষ্টসাধ্য। সুতরাং, এখানে এখন সরকারের পক্ষ থেকে কিছু থোক বরাদ্দ প্রয়োজন। পাশাপাশি ব্যাংকের সহায়তা দরকার। একই সঙ্গে কাস্টমস ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সবার সহযোগিতা থাকতে হবে। অন্যথায় এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। কেন না, এ এক্সেসরিজের কারণে গার্মেন্ট সেক্টর, লেদার সেক্টর, ফার্মাসিউটিক্যাসল সমস্যায় পড়বে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গেল অর্থবছরে এসে এ সেক্টরে মোট রপ্তানি হয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে সরাসরি রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলার। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।