অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও দলবদলের বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে ইউরোপের ক্লাবগুলোর জন্য উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) নীতিমালা রয়েছে। এ নীতিমালা ভেঙে প্রথম শাস্তি পেল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার সিটি। এফএফপি নীতি লঙ্ঘন করায় ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ মৌসুম উয়েফার কোনো ক্লাব টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না ম্যানসিটি; সঙ্গে ৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে তাদের। তবে চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা নিয়ে সংশয় নেই ম্যানসিটির, চলতি সপ্তাহেই রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি হবে ম্যানসিটি। আগামী দুই মৌসুম খেলতে না পারলে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো হারাবে ক্লাবটি। কো-এফিশিয়েন্ট পয়েন্টেও পিছিয়ে পড়বে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যখন ফিরে আসবে ইউরোপিয়ান মঞ্চে, তখন কো-এফিশিয়েন্ট পয়েন্ট কম থাকায় কঠিন গ্রুপে পড়তে হবে তাদের।
শাস্তি ঘোষণার পরপরই উয়েফার সিদ্ধান্তের কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ক্লাব, ক্রীড়া সম্পর্কিত সমস্যা নিরসনে গঠিত কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টে (সিএএস) উয়েফার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবে জানিয়েছে ক্লাবটি। এফএফপি নীতি লঙ্ঘনের জন্য সিটির ওপর শাস্তি নতুন নয়, ২০১৪ সালে এ আইন ভঙ্গের দায়ে সিটিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছিল উয়েফা। ম্যানসিটি যে শাস্তি পেতে যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরে বোঝা যাচ্ছিল। ২০১৮ সালে ফুটবল লিকস নামের প্রতিষ্ঠান সিটির এফএফপি লঙ্ঘন নিয়ে গোপন ই-মেইল জার্মান ম্যাগাজিন ‘দের স্পিগেল’র কাছে সরবরাহ করে। সেই ই-মেইলগুলো প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই মূলত সিটির ওপর বড় শাস্তি নেমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সিটি তখনই বলেছিল, তাদের বেশকিছু ই-মেইল হ্যাক করা হয়েছে, তাদের আশঙ্কা উয়েফার চলমান এফএফপি নীতি লঙ্ঘনের তদন্তে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেই ই-মেইলগুলো ব্যবহার করা হতে পারে।
২০১১ সালে ক্লাবগুলোর অর্থ ব্যয় কাঠামোগত প্রক্রিয়ায় আনতে এফএফপি নীতিমালা করে উয়েফা, যেখানে ফুটবলার বেচাকেনায় ক্লাব কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবে, তা নিদিষ্ট ছিল। কিন্তু উয়েফার নীতি ফাঁকি দিয়ে অর্থ আদান-প্রদানের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল ম্যানসিটি। উয়েফার তদন্তে উঠে আসে, পৃষ্ঠপোষকতা থেকে প্রাপ্ত আয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে লেনদেন করে নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছিল ম্যানসিটি। উয়েফার কাছে সিটির সরবরাহ করা আয়ব্যয়ের তথ্যের মাঝে পরিষ্কার অসংগতি রয়েছে। গেল দুই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জেতা ক্লাবটি এবার শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ২২ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে, লিগ জেতার আশা নেই বললেই চলে। চূড়ান্তভাবে সিটির ওপর উয়েফার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে গার্দিওলা সিটির সঙ্গে থাকবেন কি নাÑ কয়েক সপ্তাহে গণমাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বর্তমান চুক্তির পূর্ণ মেয়াদ অর্থাৎ ২০২১ পর্যন্ত থাকার কথা জোর দিয়ে বলেছিলেন। নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার পর গার্দিওলা তার আগের বক্তব্যে অটল থাকেন কি না, সেটি দেখার বিষয়। গার্দিওলা চলে গেলে সিটির অনেক তারকা ফুটবলারও একই কাজ করতে পারেন। মিডফিল্ডার ডেভিড সিলভা মৌসুম শেষেই ক্লাব ছাড়ছেন নিশ্চিত।
গার্দিওলা সিটি ছাড়লে ম্যানসিটির নীল অর্ধে একটি যুগের সমাপ্তি ঘটবে। ২০০৯ সালে ওয়েলশ ম্যানেজার মার্ক হিউজেসকে বিদায় দেওয়ার সময় তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে অনেকটা দূর এগিয়ে এসেছে ম্যানসিটি। ক্লাবের কাঠামোগত উন্নয়ন ও ফুটবল নিয়ে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে ক্রমেই ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্লাবে পরিণত হয়েছে তারা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চারটি দল সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলে। সিটি এ মৌসুমে পয়েন্ট টেবিলের সেরা চারে থেকে লিগ শেষ করলে পঞ্চম দলটি আগামী মৌসুমে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলবে। বর্তমানে ২ নম্বরে আছে সিটি, আর পাঁচে রয়েছে এ মৌসুমেই শীর্ষ লিগে ফেরা শেফিল্ড ইউনাইটেড। সিটির জায়গায় শেফিল্ড ছাড়াও মরিনহোর টটেনহ্যাম, নুনোর উলভস ও আনচেলোত্তির এভারটনেরও চোখ রয়েছে, তারা আছে যথাক্রমে টেবিলের ৬, ৭ ও ৮ নম্বরে।