নাজমুল হোসেন শান্ত, ১২২
প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে ১২১ রানে, হাতে ৬ উইকেট। তবুও প্রতিপক্ষ মধ্যাঞ্চলকে বোনাস পয়েন্ট না দিতে মাত্র ২৮ ওভার ২ বল খেলে ৪ উইকেটে মাত্র ১১৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল! তাতে বোলিং পয়েন্ট না পেলেও বড় লিড নিয়েছে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল! কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে শনিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) তৃতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনের মাঝামাঝি ইনিংস ঘোষণা করে দলটি!
ম্যাচে ক্রিকেটীয় চেতনার বাইরে গিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে এমন কাণ্ডে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ম্যানেজার নাফিস ইকবাল স্বীকার করেছেন, দলকে ফাইনালে তুলতে এ কৌশল নিয়েছেন তারা। বিসিএলের দুই রাউন্ড শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে দক্ষিণাঞ্চল, তাদের পয়েন্ট ১৬.৩৯। ৯.৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে মধ্যাঞ্চল। নিয়মানুযায়ী প্রথম ১০০ ওভারে ৫ উইকেট নেওয়ার জন্য প্রতি দল পাবে ০.৫ পয়েন্ট। ৭ উইকেট নিলে পাওয়া যাবে ১ পয়েন্ট। ৯ বা তার বেশি উইকেটের জন্য ১.৫ পয়েন্ট। বোলিংয়ে সর্বোচ্চ পাওয়া যাবে দেড় পয়েন্ট। যে কারণে এ সুবিধা নিতে অনেক দলই এমন কাণ্ড ঘটায়। কিন্তু এভাবে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণাঞ্চলের শেষ রক্ষা হবে তো? টুর্নামেন্টের বাইলজের আরেকটি আইনে আছে, কোনো দল টানা দুটি ম্যাচ জিতলে ১ বোনাস পয়েন্ট পাবে!
একাডেমি মাঠে শনিবার দ্বিতীয় দফায় ব্যাট করতে নেমে মধ্যাঞ্চল তুলেছে ৬ উইকেটে ২০৯। তাতে প্রথম ইনিংসে ১২১ রানের লিড বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৩০ রানের। এর আগে মধ্যাঞ্চলের ২৩৫ রানের জবাব দিতে নেমে দক্ষিণাঞ্চল নিয়েছে দারুণ ঝুঁকি! প্রতিপক্ষ মধ্যাঞ্চলকে বোলিং বোনাস না দিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটি যখন ইনিংস ঘোষণা করে তখন তাদের রান ৪ উইকেটে ১১৪ রান।
এর মধ্যেই সেঞ্চুরির পেয়ে যান মধ্যাঞ্চলের শান্ত। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যানের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরির ওপর ভর করে বড় সংগ্রহের পথেই দল। তবে ১২১ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেও শুরুতে হোঁচট খায় মধ্যাঞ্চল। এ ইনিংসও ব্যাটিং ভালো হয়নি সাইফ হাসানের, শফিউলের ইনসুইং মিস করে বোল্ড হন ১ রানে। আবদুল মজিদের ব্যাটও হাসেনি। ২১ রানে দুই টপ অর্ডার ফেরার পর তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন রকিবুল হাসান ও শান্ত। তাদের জুটিতেই দাপট দেখায় ওয়ালটন। কিন্তু চা-বিরতির পর দ্রুত ২ উইকেট হারায় ওয়ালটন। নাসুম আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হন ৩৯ রান করা রকিবুল। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মার্শাল আইয়ুব স্ট্যাম্পড হন ১১ রানে। অন্য প্রান্তে থাকা শান্ত ছিলেন অবিচল, ১৫৩ বলে ১২ চারে করে ফেলেন সেঞ্চুরি। দিন শেষে তার নামের পাশে স্কোর ১২২*। তবে দিনের খেলা শেষ হওয়ার দুই ওভার আগে মধ্যাঞ্চলের অধিনায়ক শুভাগত ও মিরাজকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান দক্ষিণের বোলাররা।
কক্সবাজারেই ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করার ম্যাচে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সমানতালে লড়ছেন উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ব্যাটসম্যান-বোলাররা। সেঞ্চুরি পেয়েছেন পূর্বাঞ্চলের ইয়াসির আলী চৌধুরী ও মধ্যাঞ্চলের নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম দিন উত্তরাঞ্চলের মুশফিকুর রহিম খেলেছিলেন ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। বল হাতে ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন পূর্বাঞ্চলের অফস্পিনার নাঈম হাসান। দ্বিতীয় দিনেও প্রায় একই চিত্র। পূর্বাঞ্চলের ইয়াসির অপরাজিত থাকলেন ১৩৩ রান করে, ২৭০ বল খেলে মেরেছেন ১৩টি চার ও দুটি ছয়। আর উত্তরাঞ্চলের বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম নিলেন ৫ উইকেট। উত্তরাঞ্চলের ২৭২ রানের জবাব দিতে নেমে দক্ষিণাঞ্চল ৭ উইকেট খুইয়ে তুলেছে ২৫৬ রান। ২৬ রানে পিছিয়ে থেকে আজ আবার ব্যাট করতে নামবে তারা। পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা ইমরুল কায়েস করেছেন ৭৬ রান। আফিফ হোসেন ধ্রুব করেছেন ২৬ রান, বাকি কেউ ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। সানজামুলের ৫ উইকেটের দিনে দুটি উইকেট নিয়েছেন অফস্পিনার সঞ্জিত সাহা।