আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

বঙ্গোপসাগরের অপার সম্ভাবনা

সুনীল অর্থনীতির হাতছানি

| সম্পাদকীয়

সম্প্রতি ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি বিশ্বজুড়েই বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য উন্নয়ন নীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ ধরনের অর্থনীতির বিস্তার একটি দেশের টেকসই উন্নয়নকে কার্যকরভাবে প্রভাবিত করে। প্রকৃতপক্ষে ব্লু-ইকোনমি এমন একটি ব্যবস্থাপনাকে নির্দেশ করে, যা সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ এবং তার সর্বোচ্চ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করে। উল্লেখ্য, সমুদ্রের জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদ বিশ্ব অর্থনীতিতে নানাভাবে অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র উপকূল ঘিরেও রয়েছে ব্লু-ইকোনমিতে সমৃদ্ধির বিশাল হাতছানি। 
আলোকিত বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, নৌবাহিনী, র‌্যাব আর কোস্ট গার্ডের নিয়মিত টহল এবং অভিযানের ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল এখন অনেকটাই অপরাধমুক্ত। ফলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের মালিকানায় রয়েছে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিশাল এ জলসীমাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। সাগরের তলদেশ ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৫ শতাংশের বেশি অর্জিত হবে সমুদ্র থেকে। বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উত্তরণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা অপার। 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানার অন্তত ১৩ স্থানে রয়েছে মূল্যবান বালু, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম। যাতে মিশে আছে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমেনাইট, জিরকন, রুটাইল ও ম্যাগনেটাইট। অগভীরে জমে আছে ‘ক্লে’, যা দিয়ে তৈরি হয় সিমেন্ট। ক্লে উত্তোলন সম্ভব হলে বাংলাদেশের সিমেন্ট কারখানাগুলো আরও শক্তিশালী হবে। এছাড়াও তেল-গ্যাসের সন্ধানও মিলেছে সমুদ্রের তলদেশে। বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছসহ ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি এবং বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও জৈব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। দেশের মোট উৎপাদিত মাছের ১৬ শতাংশ আসছে বঙ্গোপসাগর থেকে। 
সমুদ্রের পানির নিচে লুকিয়ে থাকা এসব সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের চেহারা নিঃসন্দেহে পাল্টে যাবে। এক্ষেত্রে শুধু সমুদ্র নয়, যেখানেই সম্ভাবনা রয়েছে সেখানেই বিনিয়োগ বা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন সম্ভাবনাও খুঁজে বের করতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের সম্পদশালী অনেক দেশ বাংলাদেশের নীল সমুদ্র অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, আগ্রহীদের মধ্য থেকে যোগ্য ও বাংলাদেশের জন্য অধিক লাভজনক হবে এমন দেশকে সুযোগ প্রদান করা। পাশাপাশি সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত রাখতে হবে। সমুদ্র সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আগামীতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও সমৃদ্ধ হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা।