আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

ঘুষ বনাম বখশিশ

ইকবাল রহমান
| ইসলাম ও অর্থনীতি

 

দেশে ঘুষ বলে কিছু নেই! পরিবর্তিত নাম বখশিশ, কেউ কেউ বলেন হাদিয়া, আবার অনেকে উপহারও বলতে দ্বিধা করেন না। ধরনে কোনো পরিবর্তন নেই, শুধু নামে পরিবর্তন। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশরা বখশিশ নেন। অফিসের ফাইল ছাড়াবার জন্য টেবিলের নিছ দিয়ে কেউ কেউ উপহার নেন। চাকরি পাইয়ে দেওয়ায় লাখ অঙ্কের বখশিশ নেন অনেকে। আর এসবকে ঘুষ বলতেই উনাদের যত আপত্তি। আরে ভাই, উনি তো খুশি হয়ে আমাকে এটি দিয়েছেন। এভাবে বদলে গেছে যৌতুকের নামও। বিয়ের পর জামাইরা শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার বা উপঢৌকন নেন। কী আশ্চার্য, স্থানান্তরে এ উপহারের জন্য স্ত্রীকে রীতিমত নির্যাতনও করেন অনেকে। প্রশ্ন উঠেছেÑ কোনটি ঘুষ, কোনটি বখশিশ, কোনটি উপহার, কোনটি যৌতুক। এবার উত্তর খোঁজা যাক। 
ঘুষ হলো সেটি যেটির সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক আছে, সম্পর্ক আছে ক্ষমতার। ক্ষমতাকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে নিজের বেতন বা মজুরির পরও কিছু উপরি পাওনা আদায় করাটাই ঘুষ। বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হয়ে কোনো ব্যক্তি যদি তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত কোনো কাজ করে দিয়ে সেজন্য কোনো বিনিময় গ্রহণ করে, তবে সেটা ঘুষ বিবেচিত হবে। রাসুল (সা.) ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ওপর লানত (অভিসম্পাত) করেছেন (আবু দাউদ, মিশকাত : ৩৭৫৩)। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য মজুরির ওপরে কোনো কিছু কামনা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নবী করিম (সা.) বলেন, আমরা যাকে অর্থের বিনিময়ে কোনো কাজে নিয়োজিত করি তার অতিরিক্ত কোনো কিছু গ্রহণ করা হবে আত্মসাৎ (আবু দাউদ, মিশকাত ঃ ৩৭৪৮)। রাসুল (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী  নিয়োগ করলে সে এসে বললো, এগুলো জাকাত আর এগুলো আমাকে দেওয়া হাদিয়া। এ ঘটনা শুনে রাসুল (সা.) মর্মাহত হলেন। বললেন, কর্মকর্তাদের কি হলো যে তারা এরূপ বলছে! সে তার বাবা-মায়ের বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তো কে তাকে হাদিয়া দেয়? যে সত্তার হাতে আমার জীবন তার কসম! যা কিছুই সে গ্রহণ করবে কিয়ামতের দিন তা কাঁধে নিয়ে সে হাজির হবে। (বোখারি, মুসলিম, মেশকাত : ১৭১৯)। 
বখশিশ হলো সেটি যেটি খুশি হয়ে দেওয়া হয়। কারও কোনো কাজে খুশি হয়ে কিছু প্রদান করা। ঘুষের সঙ্গে এর স্পষ্ট পার্থক্য হলো কামনা বা চাহিদার। গ্রহীতা যদি তা কামনা করেন বা এ ব্যাপারে তার চাহিদা থাকে তাহলে তা ঘুষের পর্যায়ে পড়বে। এটা শরিয়তে জায়েজ নয়। একবার রাবিয়া বিন কা’ব আসলামি (রা.) এর কাজের ওপর খুশি হয়ে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তুমি আমার কাছে চাও। (মুসলিম : ৪৮৯)।
কারও কাছ থেকে বিনিময় ব্যতীত কিছু পাওয়াকে উপহার বলে। বিভিন্ন উপলক্ষ ধরে উপহারের আদান-প্রদান হয়। জন্মদিন, ধর্মীয় উদযাপন (ঈদ, পূজা, বড়দিন, ইত্যাদি), বিবাহবার্ষিকী ইত্যাদি বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষ একে অন্যকে উপহার দিয়ে থাকে।