আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৯ জন। তাদের মধ্যে দুজন সাবেক মেয়র রয়েছেন। রয়েছেন অনেক নতুন মুখও। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের কর্মকা- নিয়ে দলের ভেতরে থাকা অস্বস্তি আর সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বাদ পড়ার পরিস্থিতি চট্টগ্রামের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এদিকে চসিক নির্বাচনে নগরপিতা হিসেবে দায়িত্ব পেতে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
কে পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নাকি অন্য কেউ তা নির্ধারিত হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার মাধ্যমে। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদানের শেষ দিন ছিল। এদিন পর্যন্ত মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় ১৯ জন আগ্রহী প্রার্থী ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন বলে দলের দপ্তর সূত্র নিশ্চিত করেছে। চসিক মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, নুরুল ইসলাম বিএসসি, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ সালাম, মহানগর-৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবর রহমান, মেজর ইমদাদুল ইসলাম (অব.), মো. ইনসান আলী, মোহাম্মাদ ইউনুস, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, প্রাথমিক সদস্য সেলিনা খান, প্রাথমিক সদস্য মোহাম্মদ মনজুর আলম (সাবেক মেয়র), মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেখা আলম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য একেএম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মাহাবুবুল আলম, এরশাদুল আমিন, মো. মনোয়ার হোসেন ও দীপক কুমার পালিত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া বলেন, এ পর্যন্ত ১৯ প্রার্থী তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। সিটি করপোরেশনের মোট ওয়ার্ড ৪১টি, সংরক্ষিত নারী আসন ১৪টি। এর বিপরীতে ৪০৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী কাউন্সিলর ফরম সংগ্রহ করেছেন। এদিকে চট্টগ্রামের রাজনীতির বাতাসে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের কোনো সদস্য মেয়র পদে আগ্রহী হয়ে ফরম বিতরণ ও জমাদানের শেষ দিন শুক্রবার পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ করেননি। মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে কী ধরনের চমক উপহার দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, তা এখন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের পাশাপাশি মনোনয়ন দৌড়ে এবার আলোচনায় এগিয়ে আছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও নগর কমিটির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
এছাড়া বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক মেয়র মনজুর আলম এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পরিচয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর আগে ফরম সংগ্রহ করতে এসে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশায় সক্রিয় আছেন চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নগরের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। তিনি ২০০৯ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের নামও। এক সময় মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত থাকলেও মহানগর রাজনীতিতে পরবর্তীতে নাছিরেরও ঘনিষ্ঠ হন। এদিকে শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এম মনজুর আলমও, যিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে একবার মেয়র হয়েছিলেন।