রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে নির্মিত কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে চীনের উহানফেরত বাংলাদেশিদের ১৪ দিনের ইনকিউবেশন পিরিয়ড শনিবার শেষ হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শনিবার রাতেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বাকিরা আজ বাড়ি যাবেন। তাদের বাড়ি ফেরার কিছু আনুষ্ঠানিকতার কাজ শেষ করতে রাত হওয়ায় সবাই বাড়ি ফিরতে পারেননি। উহানফেরত সবাই সুস্থ রয়েছেন।
এদিকে উহানফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে যেন কোনো অসুবিধা না হয় এ জন্য কোয়ারেন্টাইনের শেষ কার্যক্রম সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়নি। সেখানে সাংবাদিকদেরও অবস্থান না করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে।
করোনা ভাইরাসে আতঙ্কের মধ্যে চীনের উহান শহর থেকে দেশে ফেরা ৩১২ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরার পর দুই সপ্তাহের জন্য তাদের হজ ক্যাম্পে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অস্থায়ী পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় রাখা হয়েছিল। ছেড়ে দেওয়ার আগে শনিবার বিকালে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়। পরীক্ষা শেষে প্রত্যেককে স্বাস্থ্য সনদ এবং সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
হজ ক্যাম্পে উপস্থিত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকাল থেকে স্বাস্থ্য ফরম পূরণ শুরু হয়েছে। এই দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাংলাদেশিদের কারোর জ্বর বা বড় ধরনের কোনো অসুখের কথা তারা শোনেননি। সবাইকে সময়মতো খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে করে চীনের উহান শহর থেকে ৩১২ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি তাদের আশকোনার হজ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুই সপ্তাহ তাদের কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় রাখা হয়। এ দুই সপ্তাহ তাদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
এর আগে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, শনিবার বিকালে স্ক্রিনিং ফরম পূরণের পর সবাইকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে। এছাড়া মাস্ক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়ার পর তাদের বাড়ি পাঠানো হবে। তিনি বলেন, যদিও তারা ফ্রি তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার দিয়ে দেওয়া হবে। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের করণীয় কী, সব পরামর্শ দেওয়া হবে। এ পুরো কার্যক্রম শেষ করতে রাত হয়ে যাবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাড়ি ফিরলেন অনেকেই
বাংলাদেশিরা বাড়ি ফেরার পরেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে আইইডিসিআর। চীন থেকে দেশে ফিরলেই করোনা আক্রান্ত মনে করার কোনো কারণ নেই বলেও জানান আইইডিসিআর পরিচালক। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, কোয়ারেন্টাইন শেষ করা উহানফেরত ৩১২ নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। তিনি বলেন, স্পর্শকাতর এ জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাংবাদিক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা শুরু থেকেই সাংবাদিকদের সহযোগিতা পেয়ে আসছি। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। পরে বিজ্ঞপ্তি ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এর আগে একাধিকবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বা হবে তাদের নাম-ঠিকানা এবং ছবি প্রকাশ না করারও আহ্বান জানিয়েছে আইইডিসিআর। অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারলে, যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তারা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে পারেন। গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদে এক শিক্ষার্থীর নাম-ঠিকানা, এমনকি ছবিও দেখেছি। সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান, এ বিষয়ে একটু খেয়াল রাখতে হবে। প্রচার-প্রচারণার কারণে কেউ যেন সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন না হন। শনিবার রাতে আইইডিসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আশকোনা অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের (হাজী ক্যাম্প) ৩১২ জন যাত্রীর সবাই সুস্থ। তাদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারও মধ্যে ঈঙঠওউ-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। কোয়ারেন্টাইন পরবর্তী সময়ে ৩১২ জনকে আইইডিসিআরএ’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য, সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ, হজ ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ, বিমান কর্তৃপক্ষ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ৩১২ জন উহানফেরত যাত্রীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। উহানফেরত যাত্রীদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো হয়।