আজকের পত্রিকাআপনি দেখছেন ১৬-০২-২০২০ তারিখে পত্রিকা

করোনা ভাইরাস

ঝুঁকিতে মোবাইল সেট বাণিজ্য

মৌসুমী ইসলাম
| শেষ পাতা

--কাঁচামাল সংকটে স্থবির হবে উৎপাদন

- ইএফডি যন্ত্র আমদানিতেও শঙ্কা

দেশে মাসে মোবাইল ফোন সেটের চাহিদা ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ পিস। চাহিদার ৪০ শতাংশই উৎপাদন হয় দেশে, অর্থাৎ নামিদামি ব্র্যান্ড বাংলাদেশেই কারখানা স্থাপন করে সেট উৎপাদন করছে। কিন্তু উৎপাদনে প্রয়োজনীয় শতভাগ কাঁচামালই আসে চীন থেকে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির পরিচালক রেজওয়ানুল হক জানান, বছরে বাংলাদেশে বিক্রি হয় তিন কোটির বেশি মোবাইল ফোন সেট। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ধরে রাখতে হলে কাঁচামাল প্রয়োজন। চীনের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির থাকায় মোবাইল ব্যবসায় সংকট হতে পারে। তবে এক মাসের প্রয়োজনীয় উপকরণ মজুত রয়েছে; কিন্তু তারপর সংকট দীর্ঘায়িত হলে উৎপাদন ধরে রাখা কঠিন হবে। বিকল্প বাজারও স্বল্প সময়ে ধরা কঠিন হবে। সূত্র জানায়, মোবাইল সেট উৎপাদনমুখী খাতে এখন ১০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য। কাঁচামাল আনা না গেলে সার্বিক উৎপাদনে সংকট তৈরি হবে। দেশে বর্তমানে ৯টি কোম্পানি মোবাইল ফোন সেট উৎপাদন করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। ফলে চাহিদা তৈরি হলেও উৎপাদন না হলে বাজারে সংকট তৈরি হতে পারে। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রায় ২০ হাজার রিটেইলার, বাণিজ্য প্রতিনিধি, সেলসম্যানসহ এ খাতে নিয়োজিত লক্ষাধিক মানুষ। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা সার্বিক কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলবে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি মোবাইল মার্কেটের বিক্রেতা এবং আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, চীনের সংকট দীর্ঘায়িত হলে মোবাইল সেটের বাজারে সংকট তৈরি হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, এমনিতেই এখন মোবাইল সেটের বাজার মন্দা। তারপর পণ্যে সংকট তৈরি হলে নতুন করে বিপদ তৈরি হবে। বলা হয়, স্মার্ট এবং ফিচার দুই ধরনের ফোন সেট বিক্রি হয়। তবে এখনও দেশে ফিচার ফোনের চাহিদাই বেশি। নানা মডেলের স্বল্পমূল্যের ফোন দ্রুত সময়ের মধ্যে চীন থেকেই আনা সম্ভব। বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করলে ব্যয় বাড়বে; পাশাপাশি সময়েরও প্রয়োজন। চীন থেকে শুধু মোবাইল ফোন সেটই নয়, আসে মোবাইল নেটওয়ার্কের নানা যন্ত্রাংশ। করোনা ভাইরাসে সংকট তৈরি হওয়ায় সব ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সহসা দূর করা অসম্ভব।

প্রথমে বড়দিন, এরপর নববর্ষ, তারপর শুরু হলো করোনা ভাইরাসের প্রভাবÑ সব মিলিয়ে প্রায় দেড় মাস বন্ধ রয়েছে পণ্য আমদানি। মূলত প্রতি সপ্তাহেই চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আসে দেশে। এক্ষেত্রে দ্রুত হলে কার্গোতে, আর সময় থাকলে জাহাজে পণ্য আনেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু নতুন করে এখন দেশে কোনো যন্ত্রাংশ আসছে না। তাই কয়েকদিন পর প্রযুক্তি পণ্যের যে সংকট শুরু হবে, তা হবে ভয়াবহ। ঝুঁকিতে মোবাইল সেট

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোবাইল যন্ত্রাংশ এখন আর তেমন মজুত নেই। আর যন্ত্রাংশ না থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। অনেকেই বলছেন, দোকানে থাকা পণ্যগুলোই এখন ভরসা।
চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে ১০ হাজার ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি যন্ত্র, যা এখনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করেনি এনবিআর। তবে এ মাসেই ইএফডি যন্ত্র স্থাপনের কাজ শেষ করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তারপর আনা হবে আরও ৯০ হাজার যন্ত্র। কিন্তু ভ্যাট হিসাব করার এ যন্ত্র ইএফডি, চীন থেকে আমদানি করে বসানোর পরিকল্পনা করা হলেও তা সহসা আনা সম্ভব হবে না। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের কারিগরি বিশেষজ্ঞও চীনা নাগরিক। কিন্তু মেশিন আমদানি যেমন বাকি রয়েছে, তেমনি কারিগরি বিশেষজ্ঞরা আসতে পারছেন না। ফলে ভ্যাট ব্যবস্থা আধুনিকায়নের উদ্যোগটিও থমকে গেছে। ইএফডি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইএটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মুবিন খান জানান, ১০ হাজার যন্ত্র আমদানি হয়েছে। কিন্তু বাকি যন্ত্র আনতে হলে চীনের সঙ্গে নতুন করে চাহিদা দিতে হবে। এখন সংকটকালীন তা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ইএফডি যন্ত্র স্থাপন এবং কারিগরি সহায়তার দিতে কাজ করছে চীনা বিশেষজ্ঞ দল। কিন্তু তাদের দেশে আসা নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ইএফডি যন্ত্র স্থাপনে বিলম্ব হতে পারে। 
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাসে চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে। প্রস্তুতকৃত পণ্যই নয়, পণ্যের কাঁচামালও চীন থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। কিছুদিন গেলে পণ্যের চাহিদা বাড়বে। তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় বিকল্প বাজারের সংস্থান করতে হবে। তবে অন্য দেশ থেকে আমদানি করার ক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজন। পাশাপাশি দামের ক্ষেত্রেও উচ্চ মূল্য গুনতে হবে। বিশ্লেষকরা জানান, স্বল্পমূল্য এবং কম সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারে চীন। তাই অন্য দেশের তুলনায় চীনের প্রতি নির্ভরতা বেশি। শুধু বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর অন্য দেশও চীনের ওপর নির্ভরশীল।