বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ষ পিবিএ
সরকার ‘দমননীতি’ দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ‘দমিয়ে রাখতে’ পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার মনে করেছে; এভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন, গ্রেপ্তার ও গুম করে জনগণের যে প্রাণের দাবি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, গণতন্ত্রের মুক্তির দাবি তারা দাবিয়ে রাখবে, দমিয়ে রাখবে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে, এভাবে দমননীতি নিয়ে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে জনগণের যে ন্যায্য দাবি, সে দাবিকে কখনও দমন করা যায় না। শনিবার পুলিশের বাধায় খালেদা
জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করতে না পেরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিবের এ মন্তব্য আসে।
পুলিশের অবস্থানের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হাজার খানেক নেতাকর্মী নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেন। বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ধাওয়া করে। পরে পুলিশি বাধার মুখে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি। বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে সড়কের দুই পাশে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ওই স্থান থেকে বিএনপির কয়েক নেতাকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত খারাপ’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা বারবার তার মুক্তির দাবি করেছি, জামিন চেয়েছি এবং মুক্তির মধ্য দিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো রকমের সাড়া পাইনি। আমরা আশা করব, অতি দ্রুত মানবিক কারণে দেশের জনগণের দাবিকে সম্মান করে তারা (সরকার) দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেবে।
বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে নেতাকর্মীদের সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা কোনো সুযোগ দিতে চাই না। দয়া করে এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে যাবেন। পরবর্তী কর্মসূচি পরে ঘোষণা করব। তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে তারা গুম করেছে, খুন করেছে, নির্যাতন করেছে। আমাদের প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তাকে আজ ২ বছর ৭ দিন ধরে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৩টায় এ সমাবেশ শুরু হয়। দেড় ঘণ্টার এ কর্মসূচিতে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতারা। রিকশার ওপরে দুটি মাইক লাগিয়ে সমাবেশের কাজ চলে।
বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিলÑ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় শনিবার দুুুপুর ২টায় মিছিল হবে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে থেকে। কিন্তু সকাল ৯টা থেকেই পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে ঘিরে রাখে। নয়াপল্টন থেকে বিজয়নগর, তোপখানা সড়কের অলিগলিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। কর্মীদের কার্যালয়ে প্রবেশ করতেও বাধা দেওয়া হয় বলে নেতাদের অভিযোগ।
এরকম অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে দুুপুর আড়াইটায় হাবিব উন নবী খান সোহেল ও কাজী আবুল বাশার নেতাকর্মীদের নিয়ে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ফুটপাতে সমবেত হন।
সোহেল বলেন, তারা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবেন। এ সময় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা সরে পেছনে চলে যান। পুলিশ সরে যাওয়ার পর রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে শুরু করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সেøাগান ধরেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আজকে আমরা কর্মীদের যে সাহস দেখেছি, এভাবে যদি আপনারা রাস্তায় থাকেন, ইনশাআল্লাহ অচিরেই দেশনেত্রীকে আমরা মুক্ত করতে পারব।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি যে ভালোবাসা, এটাকে বুকে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের লাঠিপেটা করুক, প্রতিবাদ থামবে না। জেলখানায় ভরুক, প্রতিবাদ থামবে না। আমাদের গুম করুক, প্রতিবাদ থামবে না। এ প্রতিবাদ চলতেই থাকবে।
বিএনপির মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও মহানগরের কাজী আবুল বাশার ও আহসানউল্লাহ হাসানের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মহানগরের বজলুল বাসিত আনজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশে দলের কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে নেতাদের বক্তব্য শোনেন। তবে তিনি নিজে বক্তব্য দেননি। এর আগে সকালে বিএনপি অফিসের ৫ গজ দূরেই পুলিশের সাঁজোয়া যানের অবস্থান থাকতে দেখা যায়। কর্মীদের কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলেও বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন। কিছু নেতাকর্মী এক দফা মিছিলের চেষ্টা করলেও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তারা কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন।
রিজভীসহ অফিস কর্মীরা আগে থেকেই কার্যালয়ের ভেতরে ছিলেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দুপুর ১টার দিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কার্যালয়ে যান।
এদিকে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ বেশ কেয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুর রহমান সোহাগ সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে আজ (শনিবার) এর কোনো অনুমতি মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। জনস্বার্থে আমরা এখানে অবস্থান করছি। অনুমতি ছাড়া কিছু করার সুযোগ নেই।