প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্ব করেন- পিবিএ
পদ্মা সেতু হয়ে শরীয়তপুর জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ উন্নত ও নিরাপদ করতে বিদ্যমান সড়ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে সড়ক সংস্কারের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। একই সঙ্গে সড়কের আরও দুটি প্রকল্প, নদী তীর রক্ষা, সমুদ্র ও নদী বন্দর উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতের মোট নয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, সবগুলোই নতুন প্রকল্প। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা আসবে প্রকল্প সাহায্য থেকে। বাকি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনুমোদিত শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা ব্রিজ অ্যাপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৮২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য অঞ্চলের সঙ্গে জেলার উন্নত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এ সেতুর সুফল পাবে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটও। এখন এ নৌরুট মানেই যেন যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের ভোগান্তি।
মন্ত্রী বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটকে আধুনিক নৌবন্দর হিসেবে রূপ দিতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় আধুনিক সুবিধাদিসহ নদী বন্দর আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্প, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। সরকারি অর্থায়নে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে যখন এ নৌরুটে যাত্রী ও যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ কমে যাবে, তখন এটিকে গড়ে তোলা হবে বিজনেস হাব বা বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে। তখন ভারি মালামাল পরিবহনের জন্যই ব্যবহার করা হবে এ ঘাট। আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো হবে এ নদী বন্দর দিয়ে। এখান থেকে নদীপথে সারা দেশে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থাও করবে সরকার। পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালামাল প্রকল্প এলাকায় পৌঁছে দিতেও এ নদী বন্দর ব্যবহার করা হবে। আর কার্গো বা পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা গড়ে তোলা হবে।
এদিকে ৬ হাজার ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মংলা বন্দরকে রপ্তানি উপযোগী একটি আন্তর্জাতিক বন্দরে রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে মংলা বন্দরে সব ধরনের সুবিধাসহ জেটি ও কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।
একনেক অনুমোদিত অন্য প্রকল্প হচ্ছেÑ ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাগুলো নদীভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্প; ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও ১২৮ বিলুপ্ত ছিটমহল ও নদীবিধৌত চরাঞ্চল সমন্বিত উন্নয়ন’ প্রকল্প; ২ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে হবে ‘রাজশাহী মহানগরীরর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প; ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে চারে লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প; ২৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নোয়াখালী জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী কামাল উদ্দীন সড়ক হতে কবিরহাটের ফলাহারী পর্যন্ত উন্নয়ন’ প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা একনেক সভায় অংশ উপস্থিত ছিলেন।