বরিশালের তৃণমূল আওয়ামী লীগে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এখানকার অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগে একাধিক গ্রুপিং। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব চাপিয়ে দিতে চাইলেও তৃণমূল তা মেনে নিতে পারছে না। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করছেন জেলা নেতারা। যে কারণে একদিকে যেমন দল অগোছালো রয়ে যাচ্ছে, তেমনি উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জেলার সদর উপজেলা, হিজলা, বানারীপাড়া, মেহেন্দিগঞ্জ, বাবুগঞ্জে এমন অবস্থা বিরাজ করায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়। তিন বছর মেয়াদি কমিটির সাত বছর শেষ হলেও সম্মেলন করতে পারেনি তিন উপজেলায়। আর একটিতে সম্মেলন হলেও কমিটি করতে পারছে না। জেলা আওয়ামী লীগ পছন্দের ব্যক্তিকে পদ দিতে না পারায় এসব উপজেলায় সম্মেলন স্থগিত রয়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে জেলা নেতাদের কোনো সমন্বয় নেই।
বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের নেতৃত্বে একাট্টা। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী ওই এলাকার সংসদ সদস্য পংকজ নাথের সঙ্গে উন্নয়ন ও দলীয় কর্মকা-ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগও সেখানকার সংসদ সদস্য শাহে আলম নিয়ন্ত্রণ করছেন। এসব এলাকার নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্যদের মতামত ছাড়া সম্মেলনে আগ্রহী নন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাত বছর আগে পাঁচ সদস্য নিয়ে গঠিত বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ এখনও বহাল। সভাপতি ও সম্পাদকনির্ভর হয়ে কাগজে-কলমে চলছে এর নেতৃত্ব। যে কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের নেতৃত্বে তৈরি করেছে নতুন বলয়। তাদের দাবি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সংসদ সদস্যের মতামতে করতে হবে। তবে তা মানতে নারাজ জেলা আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মামুন তালুকদার বলেন, সভাপতি ও সম্পাদক পদ ধরে রাখতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠন করা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের কোনো মতামতও নেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে তৃণমূলে দল অগোছালো হয়ে আছে। চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে। দল গ্রামগঞ্জে দুর্বল হয়ে পড়ছে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। এখন তৃণমূলের সম্মেলন চলছে।
জানতে চাইলে বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের মূল ভিত্তি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যে বর্তমান কমিটি রয়েছে তার কোনো তালিকা কেন্দ্রে নেই। বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি তৃণমূলের নেতৃত্ব গঠন করতে চাইলেও সেগুলো বৈধ হবে না। তিনি বলেন, এখানে কোনো পকেট কমিটি হবে না। তৃণমূল নেতাদের মতামতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে হবে।
বানারীপারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মাওলাদ হোসেন ছানা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সময় দিলেই সম্মেলন করা হবে। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহামুদ হোসেন মাখন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ চাচ্ছেন না সম্মেলন হোক। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ আলম এমপির নেতৃত্বে এগোচ্ছে। তবে নেতৃত্ব না থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত।
হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মিলন বলেন, গেল বছর নভেম্বরে তৃণমূলের পকেট কমিটি করে উপজেলা সম্মেলন করতে চেয়েছিল একটি পক্ষ। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে বিরোধে সম্মেলন স্থগিত হয়। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের পকেট কমিটি রোধে পংকজ নাথ এমপিকে জানিয়েছি। তবে হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহামুদ টিপু বলেন, অচিরেই জেলা আওয়ামী লীগের মতামতে সম্মেলন করবেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথের সংগঠনের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ নেই।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান বলেন, ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে জেলা কমিটির নির্দেশে সম্মেলন স্থগিত রয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক তেমন একটা ভালো না। তাই কাউন্সিলে এর প্রভাব পড়তে পারে। এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও সমন্বয়হীনতার কারণে কমিটি গঠন হচ্ছে না দুই মাস ধরে।
এব্যাপারে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলন হয়নি। কেন এখনও করতে পারছে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় দলীয় অবস্থা সুসংগঠিত করতে পরিকল্পনা চলছে। সম্মেলনের মাধ্যমেই দলকে গোছাতে হবে বলে জানান তিনি।