- ২ শতাংশ আবেদনের শেষ সময় কাল
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সাড়া
- সুফল না মেলার আশঙ্কা
মন্দ ঋণ নবায়নে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ নেয়নি আলোচিত বিসমিল্লাহ গ্রুপ। জনতা ব্যাংকে ঋণ খেলাপি এ প্রতিষ্ঠান সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করেনি। আরেক ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপও সুবিধা চায়নি বলে নিশ্চিত করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতা ব্যাংক। তবে, সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছে ক্রিসেন্ট লেদার এবং অ্যাননটেক্স। ক্রিসেন্ট গ্রুপের শীর্ষ কর্তা কারাগারে থাকায় ২ শতাংশ এককালীন অর্থও জমা পড়েনি।
দীর্ঘ দিনের খেলাপি ঋণ আদায়ে সুযোগ দেয় সরকার। খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ জমা দিয়েই নেওয়া যাবে এ সুযোগ। ১০ বছরে পরিশোধ করা যাবে ৯ শতাংশ সুদে। কয়েক দফা সময় বাড়িযে ২০ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে আবেদনের সময়। তবে, আলোচিত অনেক ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানই এ সুবিধা নেয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ খেলাপি অনেক প্রতিষ্ঠানই আবেদন করেনি। তবে, অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আবেদন জমা পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকেও আবেদন পড়েছে। কিন্তু সতর্কভাবে এ সুবিধা দেবে বেসরকারি ব্যাংক। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিল ক্রিসেন্ট গ্রুপ। চামড়ায় ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে একদিকে সরকারের কাছ থেকে নগদ সহায়তা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ, অন্যদিকে রপ্তানির অর্থও ফেরত দেয়নি এ প্রতিষ্ঠান। ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদারের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিমেক্স ফুটওয়্যারের কাছে ১ হাজার ৭৯৮ এবং রূপালী কম্পোজিটের কাছে পাওনা ১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।
২০১২ ও ২০১৩ সালে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভুয়া এলসির মাধ্যমে তা বিদেশে পাচার করে বিসমিল্লাহ গ্রুপ। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে ৫২৭ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক থেকে ৩২৭ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৬১ কোটি, যমুনা ব্যাংক থেকে ১৫৪ কোটি এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি। সুবিধা নেওয়া প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনতা ব্যাংকের ঋণ নিয়মিতকরণ আবেদন পড়েছে সব ব্যাংকের থেকে বেশি। ঋণ সুবিধার জন্য এ পর্যন্ত যেসব খেলাপি গ্রহীতা ঋণ নিয়মিতকরণ আবেদন করেছে, সেসব আবেদনের ৬০ শতাংশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অ্যাননটেক্স ক্রিসেন্ট গ্রুপ আবেদন করেছে; তবে ক্রিসেন্ট গ্রুপের মালিক জেলে থাকায় তারা সামান্য অংশ জমা দিয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে, মুক্তি পেলে আরও টাকা দেবে। তবে বিসমিল্লাহ গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ২ শতাংশ সুবিধা নেয়নি। তিনি বলেন, যারা এ সুবিধা নেয়নি তারা কখনওই নেবে না। যদি না নেয়, তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আসতে হবে। যারা সুবিধা নিয়েছে তাদেরও সুযোগ দেবে ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অগ্রণী ব্যাংকই এ সুবিধা দিয়ে নগদ উত্তোলন করেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকটিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ঋণ খেলাপি সরকারের এ সুযোগ কাজে লাগাতে আবেদন করেন। তার মধ্যে ১ হাজার আবেদনই গ্রহণ করেছে এ ব্যাংক। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্লাসিফাইড থেকে ডি ক্লাসিফাইন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ সামস-উল ইসলাম। আগামী ৪৫ দিনে এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানান তিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকেরও নবায়ন হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ ব্যাংকে আবেদন পড়েছে ২ হাজার ৮০০টি। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৮৫টি আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ১০ বছরের জন্য ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মন্দ মানের খেলাপি ঋণ এ সুবিধায় নবায়ন করা হয়েছে। শুধু সোনালী এবং অগ্রণী নয়, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও সুযোগ তুলে ধরে মন্দ ঋণ তুলতে তৎপর হয়। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তারা এ সুযোগ দিচ্ছে বেশি। বেসরকারি ব্যাংকের যেসব খেলাপি গ্রহীতা ঋণ নিয়মিতকরণের আবেদন করেছে তাদের সবকিছু পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ব্যাংকের নিয়ম মেনে তাদের এসব সুযোগ দেওয়া হবে।
এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল বলেন, এককালীন পরিশোধ করার অর্থ এটা নিয়মিত করা। তবে ১০ বছরে শোধ করার বিষয়ে আমি একমত না। কারণ, একটি ঋণ এতদিন চলতে পারে না। এটা দীর্ঘায়িত হলে গ্রাহকও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এ পর্যন্ত এবি ব্যাংক একজন ঋণ খেলাপিকে এ সুবিধা দিয়েছে। আর যারা আবেদন করেছে, সেগুলো দেখভাল করে বিবেচনা করা হবে। এ ধরনের ঋণ সুবিধা দিয়ে অতীতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এখনও কোনো সুফল মিলবে না বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের যে সুবিধা দিয়েছে, আসলে সেটা খেলাপি ঋণ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না। বরং এর ফলে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হবে।